নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া:
দূরারোগ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড়সড় সাফল্য পুরুলিয়ায়। ১ লক্ষ মহিলার মধ্যে দেড় থেকে দু’জনের শরীরে দেখা যায় যে বিরল ক্যান্সার—ভালভাল ক্যান্সার, সেই রোগে আক্রান্ত ৬২ বছরের বৃদ্ধার সফল অস্ত্রোপচার করে নজির গড়ল দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এমন বিরল অস্ত্রোপচার রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে সচরাচর হয় না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম ‘স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা’। আক্রমণ করে মহিলাদের গোপনাঙ্গের বাইরের অংশ। পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের আনাড়ার বাসিন্দা পার্বতী দেবীর ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছিল। জননাঙ্গের বাঁ দিকে লিবিয়া মেজরায় ধরা পড়ে সিস্ট, যা দ্রুত আকার বাড়ায়। স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে বায়োপসি হলে ধরা পড়ে ক্যান্সার। পরিবার প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে, কারণ অধিকাংশ চিকিৎসকই তাঁকে বাইরে পাঠাতে বলেন।
শেষ পর্যন্ত পার্বতী দেবীর পরিবার তাঁকে দেবেন মাহাতো মেডিক্যালে নিয়ে আসে। সেখানেই চিকিৎসক অলোকদূত সরকারের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় ৬ সদস্যের টিউমার মেডিক্যাল বোর্ড। থাকেন গাইনোকোলজি, অঙ্কোলোজি, জেনারেল সার্জারি, রেডিওলজি, ডেন্টাল এবং প্যাথলজির চিকিৎসকেরা। নোডাল অফিসার পবন মন্ডলের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত হয়—চ্যালেঞ্জ নেবেন তাঁরা।
গত বুধবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে জটিল অস্ত্রোপচার। বাদ দেওয়া হয় গোপনাঙ্গের বাইরের অংশের একাধিক সংবেদনশীল অঙ্গ—লিবিয়া মেজরা, লেবিয়া মাইনারা, ক্লাইটোরিস, মনস পিউবিস এবং পাশের লসিকা গ্রন্থি। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভেতরের ২ সেমি অংশও। তৈরি করা হয় আলাদা মূত্রনালী। অস্ত্রোপচারের পর আক্রান্ত অংশ ‘ফ্ল্যাপ’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
যাঁরা অস্ত্রোপচারে ছিলেন:
ডাঃ তারাশঙ্কর বাগ (প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক)
ডাঃ শিবশঙ্কর মুর্মু (অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর)
ডাঃ সুসার হাঁসদা (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর)
ডাঃ সব্যসাচী মন্ডল (গাইনো সার্জেন)
ডাঃ পবন মন্ডল (স্বল্পক্ষত বিশেষজ্ঞ ও ক্যান্সার বিভাগের নোডাল অফিসার)
ডাঃ কৌশিক মাঝি ও নবনীত কুমার (অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগ)
হাসপাতালের ভাইস-প্রিন্সিপাল ডাঃ সুকোমল বিষয়ী বলেন, “কম পরিকাঠামোয় এত জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়া নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য।”
ডাঃ পবন মণ্ডল বলেন, “দেশের নিরিখে এই রোগ খুবই বিরল। এমন রোগী প্রতি এক লাখে একজন বা দুইজন পাওয়া যায়। এই জটিল অস্ত্রোপচার আমরা সম্পূর্ণ সফলভাবে করতে পেরেছি।”
পার্বতী দেবীর ছেলে উমাশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। প্রথমে ভেবেছিলাম বাইরে নিয়ে যাব। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকেরা যেভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগিণী এখন স্থিতিশীল। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে। অস্ত্রোপচারের পর অংশ পাঠানো হয়েছে বায়োপসিতে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকেরা।
Post Comment