নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঘমুণ্ডি :
যে পথে সে চলে গিয়েছে তাকে ভুল বলে রাষ্ট্র। আর তার সংগঠন বলে সংগ্রামের পথ। তবে সে পথ বড়ো পিচ্ছিল। রক্তে লাল। সেই ২০০৮ সালে অযোধ্যা পাহাড়ের আমকোচা গ্রাম থেকে চলে গিয়েছিল সে। ছাতরাজারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী স্কুলে গিয়ে আর ফেরেনি।
বয়স তখন মাত্র ৯ বছর। আর আজ সেই মীরা পাহাড়িয়া দুর্দম মাও নেত্রী। তার মাথার দাম ১ লক্ষ টাকা ধার্য করেছে রাষ্ট্র। তার নামে ঘোষণাপত্র জারি করেছে ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম জেলা আদালত। ২০১৮ সালে ঝাড়খন্ডের এমজিএম থানা এলাকায় একটি মাও নাশকতায় যুক্ত বলে অভিযোগ মীরার বিরুদ্ধে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে এই মাওবাদী নেত্রীকে ফেরার ঘোষণা করে জারি হয়েছে ঘোষণাপত্র। তাতে তাকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ঝাড়খন্ডের এমজিএম থানার পাশে কমলপুর থানার পুলিশ আধিকারিকরা বাঘমুন্ডির
আমকোচায় মীরার গ্রামের বাড়িতে এসে ওই ঘোষণাপত্র বাড়ির দেওয়ালে সেঁটে দেন। অযোধ্যা পাহাড়তলির সেই গাঁয়ের ঘরের দেওয়ালে ঘোষণাপত্র সাঁটার সাক্ষী রইলেম তার মা ও মামা।
ঝাড়খন্ডে মীরার মাথার দাম ১ লক্ষ টাকা। মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াড ভেঙে যাওয়ার পরও সেই স্কোয়াডের যে দু’জন অতি বাম এই সংগঠনে রয়েছেন তারা হলেন মীরা পাহাড়িয়া ওরফে মীনা ও তার স্বামী মাও স্কোয়াডের ডেপুটি কমান্ডার সাগর সিং সর্দার ওরফে সাগর ওরফে বীরেন সিং ওরফে রবি সিং সর্দার ওরফে ছোট বিজয়। মীরার স্বামীর মাথার দাম ২ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে এনআইএ ধার্য করেছে ১ লক্ষ টাকা। ১ লক্ষ টাকা ধার্য করেছে ঝাড়খণ্ড সরকার। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে শেষ খবর ছিল মাও দম্পতি রয়েছে ঝাড়খণ্ডের সারান্ডা জঙ্গলে। এখন তারা ছত্তিশগড়ও চলে যেতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
মীরার স্বামী সাগর ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁওয়া জেলার নিমডি থানার টেঙাডি গ্রামের সিধাডি টোলার বাসিন্দা। অযোধ্যা স্কোয়াডে থাকার সময়েই মীরার সঙ্গে ‘কমরেড ম্যারেজে’ আবদ্ধ হয় সে। কিন্তু রাজ্যে পাল বদলের পর অপারেশন গ্রিন হান্টের শেষ চরণে
একের পর এক গ্রেফতার, যৌথ বাহিনীর গুলিতে একের পর এক মাও নেতার মৃত্যু আর প্যাকেজ পেয়ে আত্মসমর্পণে মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াড ধ্বস্ত হয়ে যায়। সেই স্কোয়াডের অবশিষ্ট নেতা নেত্রী হয়ে টিকে থাকে এই দম্পতি। তখন দলমা স্কোয়াডের হয়ে কাজ করছিলেন তারা। মীরা-সাগরের নামে বাংলা- ঝাড়খন্ডে রয়েছে একাধিক মামলা।
যখন অযোধ্যা স্কোয়াডে ছিল তারা, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মীরা একবারই নিজের গ্রামে এসেছিল। কিন্তু বাড়ি মুখো হয়নি সে।শুধু চিঠি দিয়ে মাকে জানিয়েছিল, “ভালো আছি”। আজও তার অপেক্ষায় আঁচল পেতে বসে আছেন মা মণি পাহাড়িয়া। তার আকুতি , ” মেয়ে এলে আর কোথাও যেতে দিতাম না। আঁকড়ে বুকে ধরে রাখতাম। বলতাম সবাই তো বন্দুক ছেড়ে সংসারে ফিরে এসেছে। তুইও ফের।”
Post Comment