দেবীলাল মাহাত,আড়শা:
বর্ষার শুরুতেই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি বাঁশের সাঁকো। তাই বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ভেলায় পারাপার শুরু করছেন তিনটি বিধানসভার ৩৫টি গ্রামের মানুষ। ছবিটা আড়শা ব্লকের বামুনডিহা ও পুরুলিয়া ১নং ব্লকের কাটাবেড়া কংসাবতী নদী ঘাটের। বহুবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন তারা। কিন্তু সেতু আর হয়নি। ফলে সমস্যার সুরাহায় নিজেরাই তৈরি করেছেন ভেলা। সেই ভেলায় তাদের যাতায়াতের বড় ভরসা। তবে অন্ধকার নামলে সেই পথ টুকুও বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , কাটাবেড়া-বামুনডিহা ঘাটে সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। সেই দাবি মেনে বিধানসভা ভোটের আগে কংসাবতী নদীর উপর তিনটি বিধানসভার সংযোগস্থলে পুরুলিয়া ১ নং ব্লকের কাটাবেড়া ও আড়শা ব্লকের বামুনডিহা ঘাটে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল । সেতুর শিলন্যাস করেন তৎকালীন প্রাক্তন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ।পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ থেকে বরাদ্দ করা হয় ৯ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। কাজের দায়িত্ব পায় ম্যাকিনটস বার্ন লিমিটেড।কাজের সময় সীমা ছিল দুবছর। আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন এলাকার মানুষ। এবার হয়তো প্রথম তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। কিন্তু কোথায় কি? এক বছর দ্রুতগতিতে কাজ চলার পর ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে অজ্ঞাত কারনে থমকে যায় সেতু তৈরির কাজ।তারপরেই শেষ হয়ে যায় কাজের দফারফা। মাঝপথে সেতুর কাজ থমকে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে তিনটি বিধানসভার প্রায় ৫০হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ফি বর্ষায় বাঁশের অস্থায়ী সেতু ভেলাতে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদী পেরোতে হয় এলাকার মানুষকে। এই বছরেও বাশের সাঁকো জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ায় সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে ভেলায় করে চলছে নদী পারাপার। যাত্রীদের নদী পারাপারের যুক্ত বঙ্কিম মাহাত,গিরিধারি লায়া বলেন, “মানুষজনের অসুবিধার কথা ভেবে এই ভাবে পারাপারের ব্যবস্থা করেছি। যাত্রীরা যা দেন তাই নেওয়া হয়।”
তুম্বা-ঝালদা গ্রামের মধুসূদন মাহাত,কুদাগাড়া গ্রামের আকলু সিং সর্দার বলেন, “সেতুটি তৈরি হলে এলাকার আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবে। চাষ-বোকারোর সাথে অযোধ্যা পাহাড়ের দূরত্ব অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের দুর্ভাগ্য অব্যাহত। আমরা চাই অবিলম্বে সেতুর কাজ সমাপ্ত করুক প্রশাসন।
একদিকে নদীর স্রোত, অন্যদিকে যোগাযোগের সংকট—এই দুইয়ের মাঝে দিনের পর দিন জীবন বাজি রেখে নদী পারাপার করছেন হাজার হাজার মানুষ। কবে তৈরি হবে সেই কাঙ্খিত সেতু? কবে বা মিলবে নিশ্চিন্ত যোগাযোগ? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কাঁসাই এর জলে। উত্তর এখনও অনিশ্চিত।
Post Comment