নিজস্ব প্রতিনিধি,পুরুলিয়া:
এক সময়ের ‘গেরুয়া গড়’ বলে পরিচিত জঙ্গলমহলের পুরুলিয়ায় আজ বিজেপির সংগঠনে সাংগঠনিক দুর্বলতা মারাত্মক। দলের ‘আমার বুথ সবথেকে মজবুত’ কর্মসূচির অন্তর্গত সাম্প্রতিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, জেলায় অন্তত ৪০টি বুথে এখনও পর্যন্ত কমিটি গঠনই করতে পারেনি বিজেপি। নতুন করে বুথ কমিটি তৈরিতে মন্ডল স্তরের বৈঠকের পর আজ বুধবার থেকে সেই কাজ শুরু হয়েছে।
এই চিত্র যে কেবল সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়। বরং তা ইঙ্গিত দিচ্ছে জেলাভিত্তিক রাজনৈতিক জমির নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার দিকেও। বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি সংগঠন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে দলের সাংগঠনিক কৌশল ও জনসংযোগ পদ্ধতি নিয়ে।
বুথ কমিটি গঠনের আগে মন্ডল কমিটিগুলোর বৈঠকের মধ্যে দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটিকে ঢেলে সাজাতে চাইছে বিজেপি। গত ২৬ মে থেকে শুরু হওয়া ‘বুথ স্বশক্তিকরণ অভিযান’ চলবে ২০ জুন পর্যন্ত। যদিও এটি একটি বার্ষিক কর্মসূচি, কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই অভিযানকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে জেলা নেতৃত্ব। পুরুলিয়া জেলা বিজেপির সভাপতি শঙ্কর মাহাতো জানিয়েছেন, ১৯০৬টি বুথের মধ্যে সবকটিতে সভাপতি থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই বহু বুথে। মন্ডল স্তরের নেতাদের দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে। কয়েকটি বুথে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। ১২ জন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন হচ্ছে। যেখানে সভাপতি ছাড়াও থাকছেন ৭ জন পদাধিকারী।
বিশেষ দিক হিসেবে উঠে এসেছে, দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহারের বিষয়টি। প্রত্যেক বুথেই থাকবে হোয়াটসঅ্যাপ প্রমুখ, মন কি বাত প্রমুখ, লাভারথি প্রমুখ প্রভৃতি পদ। সংগঠনের গতিপথ বুঝে নিষ্ক্রিয় সদস্যদের বাদ দিয়ে সক্রিয়দের জায়গা দেওয়ারও কথা বলা হয়েছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে
এই জেলায় বিজেপি এক সময় ‘গড়’ বানিয়েছিল। কিন্তু এমন সাংগঠনিক শূন্যতা তৈরি হলো কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট শুধু সাংগঠনিক দুর্বলতার নয়। বরং মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ারও লক্ষণ। এই কর্মসূচি সফল হলেও, বাস্তবিক মাঠ পর্যায়ের যোগাযোগ এবং সাংগঠনিক ঐক্য না ফিরলে গেরুয়া শিবিরের জন্য আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Post Comment