insta logo
Loading ...
×

রাতের আঁধারে নদীতে গাড়ি, জীবন হাতে প্রাণ বাঁচালেন পুলিশ আর পাম্প কর্মীরা

রাতের আঁধারে নদীতে গাড়ি, জীবন হাতে প্রাণ বাঁচালেন পুলিশ আর পাম্প কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দোয়ান :

অন্ধকার রাত। প্রলয়ঙ্করী স্রোতে নদীর বুকে ভেসে যাচ্ছে যাত্রীবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান। চোখে কেবল মৃত্যুর ভয়। শুক্রবার রাত প্রায় একটা। আচমকা বিপদের মুখে পড়ে প্রাণ নিয়ে হাহাকার শুরু হয় গাড়িতে থাকা ৩৪ জন যাত্রীর। কিন্তু সেই রাতেই মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত দেখালেন বান্দোয়ান থানার পুলিশ ও স্থানীয় এক পেট্রোল পাম্পের কর্মীরা। তাঁদের সাহসী উদ্যোগেই বেঁচে গেল ৩০ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলার প্রাণ।

ঝাড়খণ্ডের বোকারো থেকে চিকিৎসা সেরে ফিরছিলেন পুরুলিয়ার কুয়েরডি, আস্তাগোড়া ও আশপাশের গ্রামের মানুষজন। বান্দোয়ান-গালুডি রাজ্য সড়কের আমলি জোড় কজওয়ে পার হওয়ার সময় আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্রোতের কবলে পড়ে যায় পিকআপটি। বাড়তে থাকা জলের ধাক্কায় গাড়ি ভেসে যায়, যদিও কয়েক গজ দূরে পাথরে আটকে পড়ে সেটি। তবু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে।

তখনই দু’একজন যাত্রী প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সাঁতরে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে রাজলক্ষ্মী পেট্রোল পাম্পে পৌঁছে খবর দেন। সমান্তরালভাবে কজওয়ের পাশে ডিউটিতে থাকা এক সিভিক ভলান্টিয়ারও ঘটনাটি বুঝতে পেরে দ্রুত বান্দোয়ান থানায় খবর দেন। প্রথমে কুঁচিয়া নাকায় ডিউটি করা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর রাজু চক্রবর্তী খবর পান। তিনি চারপাশের সিভিক ভলান্টিয়ারদের জড়ো করে দ্রুত ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে আসেন। পরে বান্দোয়ান থানার ওসি শেখ মনতাজ এবং থানার আরও পুলিশকর্মীরা পৌঁছন।

এদিকে খবর পেয়েই ছুটে যান পাম্পের কর্মী জগদীশ মুর্মু, পবন রায়, এজারুল হক, বৈদ্যনাথ তন্তুবায় ও গুরুপদ কর্মকার। পুলিশ ও পেট্রোল পাম্প কর্মীরা একসঙ্গে নামেন উদ্ধার কাজে। অন্ধকার রাত, নদীর বুক চিরে ঝড়ো স্রোত। সেই মৃত্যুফাঁদে ঝাঁপিয়েই তাঁরা টেনে আনতে থাকেন একে একে সকলকে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক্টর থেকে আনা দড়ি কাজে লাগে উদ্ধার অভিযানে। প্রায় এক ঘণ্টার লড়াই শেষে রক্ষা পান সব যাত্রী। পরে তাঁদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘ওই রাত যদি পুলিশ ও পাম্পের কর্মীরা ঝাঁপিয়ে না পড়তেন, এতগুলো প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হতো না।’’ বিশেষত এএসআই রাজু চক্রবর্তীর ভূমিকা নিয়ে এলাকায় চলছে জোর আলোচনা।

প্রশাসন জানিয়েছে, টানা বর্ষণে বান্দোয়ান ও মানবাজার ব্লকের একাধিক কজওয়ে দিয়ে জল বইছে। বহু গ্রাম যোগাযোগহীন হয়ে পড়েছে। কুইলাপাল, বোরো-জয়পুর, আঁকরো-রঘুনাথপুর, সাগাসুপুরডি—সব এলাকাই কার্যত বিচ্ছিন্ন। টটকো জলাধারের গেট খোলার পর বিপদ আরও বেড়েছে। তাই কজওয়ে পারাপারে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গত রাতের অভিজ্ঞতা এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে এলাকার মানুষের। তাঁরা বলছেন, “ত্রাতার ভূমিকায় পুলিশ আর পাম্পের কর্মীরাই দেখালেন মানবিকতার আসল চেহারা।”

Post Comment