নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
লড়াই বাইরের নয়, ভেতরের। পিঠে ছুরি মারার বদ স্বভাবই ডুবিয়ে দিচ্ছে পুরুলিয়ার তৃণমূলকে। জঙ্গলমহলের এই জেলায় তৃণমূলের সবচেয়ে বড় শত্রু বিজেপি নয়, বরং নিজেদের ভেতরের গোষ্ঠীকোন্দল। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাই সোমবার কলকাতায় জেলা নেতৃত্বকে ডেকে কড়া ভাষায় বার্তা দিয়েছেন তিনি—“অন্তর্ঘাত বন্ধ করতেই হবে।”
একসময় পুরুলিয়ায় ছিল তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে বিকল্পহীন হয়ে গিয়েছিল শাসক দল। কিন্তু ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর পারস্পরিক অবিশ্বাসে জর্জরিত সংগঠন দ্রুত শক্তি হারাতে থাকে। তার ফলশ্রুতিতেই ২০১৯ সালের লোকসভায় ২ লক্ষেরও বেশি ভোটে বিজেপির কাছে হারতে হয় তৃণমূলকে। অথচ স্রেফ গোষ্ঠী-কলহ না থাকলে জেতা সম্ভব ছিল বলেই মনে করেন দলেরই একাংশ।
রাজ্য নেতৃত্বও স্পষ্ট বুঝেছে—পুরুলিয়ার সংগঠনের মূলে সমস্যা ‘ভেতরের লড়াই’। সভাপতি যেই হোন না কেন, বিরোধী লবি তাঁর কাজকর্মে বাধা দেয়। কখনও প্রকাশ্যে, কখনও আড়ালে। ফলে বুথ স্তরে সংগঠন মজবুত হওয়ার কাজ বারবার আটকে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি সামলাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার কলকাতায় জেলা নেতৃত্বকে বৈঠকে বসিয়ে পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন—দলকে ভাঙা যাবে না, গোষ্ঠীভেদ ভুলতে হবে। খারাপ ফল হওয়া বিধানসভাগুলিতে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন তিনি। আর তার প্রভাব পড়েছে বৈঠকের পরদিনই। মঙ্গলবার থেকে জেলা সভাপতি রাজীব লোচন সরেন ব্লক সভাপতিদের একে একে ডাকছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ শিবিরগুলিতে জনপ্রতিনিধি থেকে ব্লক নেতা—সবাইকে সক্রিয় থাকতে হবে, সেই বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
হুড়া ব্লকের বিশপুরিয়া শিবিরে মঙ্গলবার উপস্থিত ছিলেন এই প্রকল্পে পুরুলিয়ার জন্য পরিদর্শকের দায়িত্বপ্রাপ্ত আদিবাসী উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী বুলু চিক বারাইক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো। জেলা সভাপতি রাজীব লোচন সরেন বলেন, “আমাদের নেতা যা নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তা মেনে কাজ শুরু করেছি। সমাধান শিবিরে ব্লক সভাপতিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।”
প্রশ্ন একটাই—অভিষেকের কড়া নির্দেশে পুরুলিয়ার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সত্যিই মিটবে, না কি এই পিঠে ছুরি মারার বদ স্বভাবই জেলায় তৃণমূলের ভবিষ্যৎ ডুবিয়ে দেবে?










Post Comment