insta logo
Loading ...
×

বান্দোয়ানের সেই বাঘ ঝালদার সীমানায়, গৃহস্থের চৌকিতে ঘুম!

বান্দোয়ানের সেই বাঘ ঝালদার সীমানায়, গৃহস্থের চৌকিতে ঘুম!

সুইটি চন্দ্র, সিলি(ঝাড়খন্ড):

জঙ্গলমহল বান্দোয়ান থেকে অযোধ্যা পাহাড়মুখী
সেই জিনাত সঙ্গী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এখন আবার পুরুলিয়ার সীমানায়। ঝাড়খন্ডের রাঁচি ডিভিশনের
সিলি বনাঞ্চলের মারদু গ্রামে এক গৃহস্থের বাড়িতে বন্দি হয়ে রয়েছে সে। কথাটা খুব অদ্ভুত ঠেকছে না? কিন্তু এটাই যে বাস্তব।

বুধবার একেবারে ভোর সাড়ে চারটের সময় ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ওই মারদু গ্রামের বাসিন্দা পুরন্দর মাহাতোর গৃহস্থে ঢুকে পড়ে। একেবারে নিজের চোখের সামনে তা দেখতে পান চাষাবাদ ও প্রাণীপালন করা ওই পুরন্দর। তার কথায়, “তখন ভোর সাড়ে চারটে হবে। সকালের মতোই পরিষ্কার সব দেখা যাচ্ছে । গোয়াল ঘর থেকে একের পর এক গরু, ছাগল বার করছি। ওই অবস্থায় দেখি আমার ঘরে হলদে ডোরাকাটা লাফ দিয়ে ঢুকে গেলো। আমি তো অবাক। ” তখন যে ওই ঘরে তাদের বাড়ির তিন শিশু খাটে শুয়ে রয়েছে।

একেবারে বাঘের উপস্থিতিতেই পুরন্দর
ওই তিন শিশুকে এক এক করে পরিবারের সদস্যদের হাতে হাতে দিয়ে অন্যত্র সরানো হয়। এমন সময় কোনভাবে আটকে পড়ে দরজা। তারপর এক ঘরে আধঘন্টা রয়্যাল বেঙ্গলের মুখোমুখি পুরন্দর। এরপর আধ ঘন্টা একে অপরকে দেখছে। এই কথা গল্প বা উপাখ্যানের মত মনে হলেও বুধের সকালে এমনই ঘটেছে সিলির বাসিন্দা পুরন্দরের সঙ্গে। আসলে ওই জিনাত সঙ্গী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের স্বভাব যে ভীষণই শান্ত।


মানুষখেকো নয়। তা গত ৬ মাসে বান্দোয়ান, ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি, দক্ষিণ বাঁকুড়া, দলমায় বারে বারে তা প্রমাণ দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে বাঘে-মানুষে আধঘন্টা মুখোমুখির পরও শুধু একে অপরকে চেয়ে দেখেছে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? পুরন্দর যে নিজের অভিজ্ঞতা শুনিয়ে এমন কথাই বলছেন। তার কথায়,” বাঘটি ঘরে ঢুকে একটি চৌকির ওপর বসে পড়ে। তখন ওই ঘরে তিন শিশু শুয়ে ছিলো। এক এক করে তাদেরকে উদ্ধার করে দরজা আটকে আমি কোন ভাবে ওই ঘরে আটকা পড়ে যায়। তারপর আধঘন্টা আমি আর বাঘ। একেবারে আমার দিকে চেয়েছিল। আমিও নিজের স্নায়ু ঠিক রেখে তাকিয়ে ছিলাম। কোন ভাবে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করে ওই ঘর থেকে বার হয়ে দরজা আটকে দিই।”

এদিকে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করার জন্য রাঁচি ডিভিশন থেকে বনদপ্তরের টিম আসছে। পুরুলিয়া বনবিভাগও তাদের সীমানায় টিম নিয়ে তৈরি। অন্যদিকে সিলি থানার পুলিশ ওই গৃহস্থের চারপাশ কর্ডন করে রেখেছে। ঝাড়খন্ড বনবিভাগ সূত্রে খবর, দুপুর একটা নাগাদ উদ্ধারকার্য শুরু হবে। এই উদ্ধার কাজে যাতে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কোনো ক্ষতি না হয় এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ঝাড়খন্ড বনদপ্তর।

ঝাড়খণ্ডের পালামৌ টাইগার রিজার্ভ থেকে আসা এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। চান্ডিল বনাঞ্চলে মৃত বাছুর দেখতে পান এলাকার মানুষজন। এক বালক ওই জঙ্গলে ওই হলদে ডোরাকাটাকে দেখতে পেয়েছিল। এরপর ঝাড়খন্ডের চান্ডিল বনাঞ্চল ঘুরে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বান্দোয়ানে প্রবেশ করে। বান্দোয়ানের সেই রাইকা পাহাড়। যেখানে ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে আসা জিনাত ডেরা বেঁধেছিল। এরপর রাইকা পাহাড়ে বেশ কিছু দিন কাটিয়ে কখনও ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি, আবার কখনও দক্ষিণ বাঁকুড়া, আবার কখনও দলমা। আবার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়। গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি বান্দোয়ানে তার গতিবিধির শেষ খবর পাওয়া যায়। ১ মার্চ দল দলমায় ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তারপর আর ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কোন ছবি পাওয়া যায়নি। এরপর জিনাত সঙ্গী সমগ্র গ্রীষ্ম দলমায় কাটিয়ে চান্ডিল, খুঁটি হয়ে অযোধ্যা পাহাড়মুখী হয়। তবে গত ১৫ দিন দিন ধরে সিলি বনাঞ্চলেই ছিল এই রয়্যাল বেঙ্গল। একাধিক গরু শিকার করে সে। কিন্তু সেই ডিসেম্বর থেকে জিনাতকে খুঁজে বেড়ানো ওই বাঘ যে গৃহস্থে
ঢুকে পড়বে তাকে জানতো!

Post Comment