নিজস্ব প্রতিনিধি, রঘুনাথপুর :
শুধু বাংলা বলেছিলেন। সন্দেহ হল পুলিশকর্মীদের। তার জেরে বাংলাদেশি তকমা গায়ে সেঁটে টানা চার দিন আটক থাকতে হল পুরুলিয়ার ছ’জন পরিযায়ী শ্রমিককে।
ঘটনাটি ওড়িশার ঝাড়সুগদা জেলার বানহারপালি থানা এলাকায়। পাথর খাদানের কাজ করতে রঘুনাথপুর থানার রাইডি গ্রামের ছয় শ্রমিক গিয়েছিলেন ওড়িশায়। ২৫ জুন তাঁরা পৌঁছান ঝাড়সুগদার একটি খাদানে। অভিযোগ, ১০ জুলাই স্থানীয় পুলিশ তাঁদের ডেকে পাঠায়। শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই সন্দেহ হয়, এবং তাঁদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধরে নেওয়া হয়।
এরপর শুরু হয় এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। চার দিন আটকে রেখে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। মেলে না ঠিক করে খাবারও। কোনও আইনজীবী বা অভিভাবকের উপস্থিতি ছিল না, ছিল না অনুবাদকেরও সাহায্য।
পরিযায়ী শ্রমিক সাইদুলের কথায়, “আমরা বলেছিলাম আমরা পুরুলিয়ার মানুষ। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ছিল আমাদের কাছে। কিন্তু কেউ শুনতেই চায়নি।”
নথিপত্র যাচাইয়ের পর অবশেষে ছাড়া পান তাঁরা। ফিরে এসেছেন নিজের গ্রামে। কিন্তু আতঙ্ক এখনও কাটেনি। আহমেদের গলায় ক্ষোভ, “জানলে যেতামই না। এবার আর বাইরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।”
শ্রমিকদের অভিযোগ, জেলার মধ্যে কাজের খোঁজে গেলেও টাকা চাওয়া হচ্ছে। শেখ লিয়াদতের কথায়, “কাজ যদি থাকত, আমরা কেউ বাইরে যেতাম না। মাটিতে বাঁচার অধিকার চাই।”
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—বাংলা ভাষায় কথা বললেই কি এখন সন্দেহ?যে ভাষায় গাওয়া হয় ভারতের জাতীয় সংগীত, যে ভাষায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছে এই দেশ—সেই বাংলা ভাষাই কি হয়ে উঠল শত্রুর ভাষা?
পরিচয় প্রমাণে কাগজপত্র দেখালেও, চার দিনের অপমান ও হেনস্থা মুছে ফেলতে পারবেন কি তাঁরা? রঘুনাথপুরের এই পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে সেই জবাব এখনও মেলেনি।
Post Comment