নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া:
বধূর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে উঠল খুনের অভিযোগ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুরুলিয়া মফস্বল থানার হুলকা গ্রামের শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেওরকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মৃতার জা ফেরার। তার খোঁজে চলছে তল্লাশি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা হল দীনেশ মাহাত ও তার বাবা-মা—নির্মল মাহাত ও গীতারানি মাহাত। শুক্রবার ধৃতদের পুরুলিয়া জেলা আদালতে পেশ করা হলে নির্মল ও দীনেশের তিন দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। গীতারানিকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। জয়পুর থানার নারানপুর গ্রামের কাছে এক নিমগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এক গৃহবধূর দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে জানা যায়, মৃতার নাম মিঠাইমণি মাহাত, শ্বশুরবাড়ি পুরুলিয়া মফস্বল থানার হুলকা গ্রামে। পুলিশ প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়।
পরিস্থিতি পালটে যায় বুধবার রাতে। মৃতার ভাই, ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চন্দনকিয়ারি থানার ওদরোকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা দ্বারিক মাহাত পুরুলিয়া মফস্বল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি পুলিশকে জানান, “২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর মিঠাইমনির বিয়ে হয়েছিল অরূপ মাহাতের সঙ্গে। অরূপ বর্তমানে চেন্নাইয়ে শ্রমিকের কাজ করেন।”
অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা—শ্বশুর, শাশুড়ি, দেওর ও এক জা—নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন মিঠাইমনির উপর। অন্যদিকে পরপর দু’বার গর্ভপাত হওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্তও হয়ে পড়েন ওই গৃহবধূ।
দ্বারিকের দাবি, গত সোমবার দুপুরে মিঠাইমনিকে শ্বশুর বাড়িতে মারধর করা হয়। পরে অটোতে চাপিয়ে তাঁকে বাপের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ওঝার কাছে। বধূর বাবা-মাকেও সঙ্গে নেওয়া হয়। কিন্তু ফেরার পথে চাষ মোড়ে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে, মিঠাইমনিকে নিয়ে অভিযুক্তরা চলে যায়।
সেদিন মধ্যরাতে মিঠাইমণির বাবা-মা বাড়ি ফিরে আসেন। আর পরদিন সকালে উদ্ধার হয় তাঁদের মেয়ের ঝুলন্ত দেহ। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে পরিকল্পনা করে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেহ গ্রামে ফিরতেই উত্তাল হয়ে ওঠে হুলকা গ্রাম। ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে পথ অবরোধে নামে তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক জা-র খোঁজে তল্লাশি জারি। ধৃতদের জেরা করে ঘটনার আসল সত্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
Post Comment