সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া :
মাসে আয় হয় মাত্র পাঁচ হাজার টাকা, তাও নিয়মিত নয়। বাবার সবজি চাষের টাকায় কোনও রকমে চলে সংসার। সেই টানাটানির মধ্যেই রাজ্য জয়ের গল্প লিখছে মাহালিতোড়া গ্রামের পুষ্পরানি মাহাতো।
৭৩তম রাজ্য অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব ২৩ মহিলা বিভাগে ১০ হাজার মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছে এই কলেজ ছাত্রী। সময় নিয়েছে ৪৫ মিনিট ৩০.২ সেকেন্ড। তাতেও খুশি নয় পুষ্পরানি। তার কথায়, শরীর ভাল না থাকায় সময় বেশি লেগে গিয়েছে। লক্ষ ছিল ৪১ থেকে ৪২ মিনিটে শেষ করার।

ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাথলেটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ও সাই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজিত হয় এই প্রতিযোগিতা। ২০ থেকে ২২ জুন ছিল অনূর্ধ্ব ২০, ২৩ এবং সিনিয়র পুরুষ-মহিলা বিভাগ। সেখানেই সেরা হয়ে সোমবার সকালে নিজের গ্রামে ফেরে পুষ্পরানি।
পুষ্প মানবাজার ১ নম্বর ব্লকের কুড়ুকতোপা কলেজের শারীর শিক্ষা অনার্সের ছাত্রী। এখন সেকেন্ড সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সেও সমান সক্রিয়। গত বছর এই প্রতিযোগিতাতেই ৫০০০ মিটার দৌড়ে সোনা পেয়েছিল। তার সুবাদে অংশ নিয়েছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪-এ, ওড়িশার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে ফিরেছে ব্রোঞ্জ নিয়ে।
এছাড়া, গত জানুয়ারিতে পুরুলিয়ায় বেঙ্গল রোড রেস অ্যাসোসিয়েশন ও জেলা পুলিশের আয়োজিত ৬ কিমির ক্রস কান্ট্রি প্রতিযোগিতায় পেয়েছিল তৃতীয় স্থান।

ছেলেবেলা থেকেই গ্রামেরই প্রাক্তন অ্যাথলিট বিষ্ণুপদ মাহাতোর কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পুষ্পরানি। তার স্বীকারোক্তি— বিষ্ণুদার প্রশিক্ষণ ছাড়া এতদূর পৌঁছতে পারতাম না।
মানভূম স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে খেলে সে। সংস্থার সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওর সাফল্যে আমরা খুশি। যদিও সময়টা আরও কিছুটা কম হলে ভালো লাগত।”
দারিদ্র্যকে জয় করে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে এই সোনার মেয়ে। সামনে আরও লম্বা দৌড়। দক্ষিণী সিনেমার পুষ্পারাজ বলেছিল, ফ্লাওয়ার নয়, সে আগুন। পুরুলিয়ার পুষ্পও বা কম কীসে?জেলাবাসীর শুভকামনা নিয়ে ট্র্যাকে আগুন ছোটাবেই পুষ্পরানি।
Post Comment