insta logo
Loading ...
×

পুরী থেকে মাথায় করে এসেছিল জগন্নাথ বিগ্রহ… তারপর…

পুরী থেকে মাথায় করে এসেছিল জগন্নাথ বিগ্রহ… তারপর…

নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া :

বুধবার জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা। আর সেই উপলক্ষে পুরুলিয়া জুড়ে ঘটা করে পালিত হল জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে উৎসবের আমেজ। পুরুলিয়া শহর থেকে হুড়া, বলরামপুর থেকে জয়পুর— সর্বত্রই উপচে পড়ল ভক্তের ভিড়।

বলরামপুরের কালিতলা জগন্নাথ মন্দিরে ধুমধাম করে পালিত হল মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের ঐতিহ্যবাহী স্নানযাত্রা। বুধবার সকাল দশটা নাগাদ শুরু হয় স্নানযাত্রার মূল পর্ব। সুগন্ধি জল, পঞ্চদ্রব্য ও হলুদের সংমিশ্রণে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহকে।

পুরীর নিয়ম মেনেই এদিন বিগ্রহগুলি স্নানবেদীতে এনে প্রথাগতভাবে স্নান করানো হয়। এই সময় মন্দিরে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে। প্রায় তিন ঘণ্টার দীর্ঘ আচারপর্ব শেষে দেবতাদের নতুন বেশভূষায় সাজিয়ে মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয় ভক্তদের জন্য। তারপর অন্ন, ভোগ ও মহাপ্রসাদে হয় দেবসেবা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ থেকে ১০১ বছর আগে বলরামপুরের মাঝি পরিবারের শ্রীকান্ত মাঝি স্বয়ং পুরী থেকে মাথায় করে নিয়ে আসেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ। তারপর থেকেই বলরামপুরে শুরু হয় মহাপ্রভুর নিত্যসেবা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ধরে রাখা হয়েছে রথযাত্রা ও স্নানযাত্রার ঐতিহ্য।

অন্যদিকে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা ঘিরে মেতে উঠল জয়পুর। রীতি অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় আয়োজিত হয় স্নানযাত্রা। জয়পুর চটিপাড়া হরিমন্দিরে প্রতি বছরের মতো এবছরও আয়োজিত হয় জগন্নাথ বলভদ্র সুভদ্রার স্নান যাত্রা। জয়পুরে অবশ্য সাধারণ জনগণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নেই। ধর্মপ্রাণ মানুষজনের উপস্থিতিতে উৎসব হয়ে ওঠে জমজমাট।

হুড়ার নিমতলা মোড়ের কাছে নির্মীয়মাণ জগন্নাথ মন্দিরে আয়োজিত হল স্নানযাত্রা। মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য শ্যামাপদ দত্ত ও গৌতম কুন্ডু বলেন, “পুরীর রীতি অনুসরণ করেই চলছে অনুষ্ঠান। সবার অংশগ্রহণে এই উৎসব আমাদের কাছে পরম প্রাপ্তি।”

বিশেষত্ব? এখানে শবর ও কালিন্দী জনজাতির মানুষও সরাসরি অংশগ্রহণ করেন স্নানযাত্রায়। পুরাণ মতে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন যখন ভগবানকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ, তখন জানা যায় তিনি নীলমাধব রূপে পূজিত হচ্ছেন অন্ত্যজ শ্রেণির ভক্তদের মাধ্যমে। সেই শ্রেণির অধিকার রক্ষাতেই হয় স্নানযাত্রা— যেখানে সকলেই প্রভুর সেবায় অংশ নিতে পারেন।

মাগুড়িয়া থেকে আসা লালমোহন শবর বলেন, “প্রভুর স্নান দেখে মনে শান্তি পেলাম।” পাশে দাঁড়িয়ে পায়েল কালিন্দীর আবেগমাখা গলা, “এই দিনটার জন্যই সারা বছর অপেক্ষা করি।”

পুরুলিয়া শহরের সরবাগান জগন্নাথ মন্দিরেও ছিল ব্যতিক্রমী দৃশ্য। ১০৮টি কলসে কাঁসাই নদীর জল এনে কুমারী মেয়েরা নিজ হাতে স্নান করালেন প্রভুকে। এরপর মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ঘি, দুধ, দই, মাখন ও সুগন্ধি জল দিয়ে স্নান সম্পন্ন হয়।

এদিন সন্ধ্যায় কাশিপুরের নামোপাড়া ষোল আনা হরি মন্দির থেকে বের হয় মহাপ্রভুর নগর পরিক্রমা। এখানকার জগন্নাথ দেব অধিষ্ঠিত ‘মহাপ্রভু’ নামে। ইতিহাস বলছে, পঞ্চকোট রাজাদের আমল থেকেই চলছে এই মন্দিরের সেবা। শোভাযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন হাজারো মানুষ।

Post Comment