insta logo
Loading ...
×

দ্বীপের দেশে কয়েকটা দিন, পরকেও আপন করে থাইল্যান্ড

দ্বীপের দেশে কয়েকটা দিন, পরকেও আপন করে থাইল্যান্ড

গোরাচাঁদ চক্রবর্তী
সহকারী অধ্যাপক,গনিত বিভাগ, সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরুলিয়া
ই-মেইল-gorachand11@gmail.com
যোগাযোগ -৭৩৮৪৩১৯০৩৮

বিয়ের পর অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম যে কোথাও একটা ঘুরতে যাই । কর্মসূত্রে কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটি আসার ফলে ছুটির অভাবে আর বেরোনো হয়ে উঠছিল না । অনেকের সাথে আলোচনা ও গুগল সার্চ করার পর আমি ও আমার স্ত্রী স্থির করলাম পুজোর ছুটিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রবেষ্টিত দেশ থাইল্যান্ড ঘুরে আসা যাক । সেই মতো হোটেল , মানি এক্সচেঞ্জ এবং যাওয়া আসার ফ্লাইট বুকিং করে ফেললাম । ত্রয়োদশীর দিন দুপুর ২ টোর সময় ট্রেনে চেপে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । রাত ১ টা ৪৫-এ আমাদের ব্যাংকক যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। খাওয়া-দাওয়া সেরে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম রাত ১০ টায় । প্রথমেই থাইল্যান্ডের একটা সিমকার্ড কিনে এয়ারপোর্ট-র যাবতীয় ফরমালিটি সেরে ফ্লাইট ধরলাম। ফ্লাইট এ কলকাতা থেকে ব্যাংকক আসতে সময় লেগেছিল আড়াই ঘন্টা। থাইল্যান্ডের সময় অনুযায়ী ভোর ৫. ৪৫-এ ব্যাংকক ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট-এ
পৌঁছালাম। বছরের বেশ কিছু সময় পর্যটকদের সুবিধার্থে থাইল্যান্ডে অন এরাইভাল ভিসার সুযোগ থাকে। আমরাও সেই সুযোগ পেয়েছিলাম তাই গিয়ে পরে অন এরাইভাল ভিসা আবেদন করে এয়ারপোর্টে চেক আউট করে বাসে করে ব্যাংকক বাস স্ট্যান্ড -এ এলাম ।

ব্যাংককের সিস্টেমেটিক বাস স্ট্যান্ড দেখে সত্যিই অভিভূত হয়ে যায়। পরিষ্কার- পরিছন্নতা, নিয়মানুবর্তিতা ও সুব্যবস্থাপনায় থাইল্যান্ডবাসি যে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে তা অনুভব করলাম । পাটায়ার উদ্দেশ্যে আমাদের বাস ছাড়ল বেলা ১১ টায় । বাসের মধ্যে টয়লেট দেখে থাইল্যান্ডবাসীর উন্নত চিন্তা ধারার পরিচয় পেলাম । বাসে চাপার পর ব্যাংককের ঝাঁ-চকচকে আকাশছোঁয়া বহুতল, অসাধারণ ফ্লাই ওভার , সাজানো গোছানো শহর , ব্যস্ততার মাঝেও নিয়ম-শৃঙ্খলা থাইদের দেখে আপ্লুত হলাম । বাস যত পাটায়ার দিকে এগোতে লাগল ততই যেন আমরা প্রকৃতির কোলে ঢলে পড়তে লাগলাম । অবশেষে দুটোর সময় পাটায়া পৌঁছে সোজা উঠে গেলাম হোটেলে। হোটেলের আতিথেয়তা দেখে থাইদের পরকে আপন করার মানসিকতায় অভিভূত হলাম । অতিথিদের আতিথেয়তাতে যাতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি না হয় তাতে থাইদের সজাগ দৃষ্টি ছিল । খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়ে পড়লাম পাটায়া বিচ-এ। পাটায়ার অসাধারণ সমুদ্রতট , সমুদ্রের ঘন নীল জল, শান্ত স্নিগ্ধ ঢেউ আমাদেরকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে দিনের শেষ ভাগ টা এমন ভাবে কেটে গেল যে কিছু বুঝতেই পারলাম না । পাটায়ার বর্ণময় নাইট লাইভ দেখে স্থানীয় মার্কেট ঘুরে ডিনার করে হোটেলে ফিরলাম । পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম স্পিড বোট-এ করে কোরাল আইল্যান্ড । সেই সময় বর্ষাকাল থাকায় আমরা মাঝ সমুদ্রে থাকাকালীন প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ায় এক ভয়াবহ অনুভূতির অংশীদার হয়েছিলাম । সেই ভয়াবহ মুহূর্তে থাইদের তৎপরতা, অকুতোভয় মানসিকতা আমাদেরকে কিছুটা হলেও সাহস জুগিয়েছিল । সমুদ্রের জলের মধ্যে বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশ নিতে নিতে কোরাল আইল্যান্ড পৌঁছালাম । আইল্যান্ডের মনোরম পরিবেশ, পাহাড়, পাহাড়ের উপর মন্দির , কাঁচের মত স্বচ্ছ জল, দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্র যেকোনো পর্যটককে কাছে টানবে বলে আমাদের বিশ্বাস । বেলা শেষে পাটায়া ফিরলাম এবং দেবদূতের শহর ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । পরেরদিন ব্যাংকক সুবর্নভূমি এয়ারপোর্ট থেকে ফুকেট-র উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম সকাল ৮ টা ২০তে । ফুকেট পৌছালাম বেলা ১০ টায় । ফুকেট পৌছে প্যাটং বিচ-র কাছে এক হোটেলে আশ্রয় নিলাম । স্নান খাওয়া-দাওয়া সেরে প্যাটাং মার্কেট ও প্যাটাং বিচ ঘুরলাম । তারপর প্যাটাং বিচের সানসেট দেখে ইন্ডিয়ান রেস্তোরাতে খাওয়া দাওয়া সেরে হোটেলে ফিরলাম । থাই ফুড ও সি ফুড খেয়ে যখন হাঁপিয়ে গেছিলাম তখন মাড্রাস-র একটি রেস্তোরা পেয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম । পরের দিন ফি ফি আইল্যান্ড‌‍র ট্যুর । ফি ফি আইল্যান্ড‌ যাওয়ার পুরো রাস্তা টা‍ই ছিল দুঃসাহসিক ও রোমহর্ষক। অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ পার হয়ে অনেকগুলো পাহাড়বেষ্টিত রাস্তা দিয়ে যখন আমাদের‌ জাহাজ যাচ্ছিল সে এক অপরূপ অনুভূতির সাক্ষী হয়েছিলাম । যখন ফি ফি আইল্যান্ড-এ পৌঁছালাম। তখন ওখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য আমাদের মনকে ফুরফুরে করে তুলেছিল । আইল্যান্ডের প্রতিটি প্রান্তর ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম । ফি ফি ভিউ পয়েন্ট থেকে পুরো দ্বীপটাই দেখা যায় । ওখানকার মান্কী দ্বীপ, মায়া দ্বীপ এবং বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ আমাদের অনেকটা সময় নিয়ে নিয়েছিল । তারপর আইল্যান্ডের ঘন নীল জলে গা ভেজালাম । অনেকে চাইলে ফি ফি তে রাত কাটাতেও পারেন । জীবনে প্রথমবার জাহাজে চাপার অনুভূতি ও ভয় দুটোই খুব দারুন ভাবে উপভোগ করেছিলাম । উত্তাল সমুদ্রে দুদুল্যমান চারতলা জাহাজে লাঞ্চ করা, সামুদ্রিক দৃশ্য দেখা ও নাচ-গানে অংশগ্রহণ করার অনুভুতিই ছিল অন্যরকম । দিনের শেষে ফি ফি আইল্যান্ড থেকে ফিরে বাংলা ওয়ালকিং স্ট্রিট ঘুরলাম । তারপর ফুকেটের স্থানীয় মার্কেট থেকে বাজার পত্র সেরে হোটেলে ফিরেছিলাম । পরেরদিন ফুকেট সিটি ট্যুর শুরু করলাম সকাল ৭ টায় । ঘুরতে লাগলাম করণ ভিউ পয়েন্ট, করন বীচ, বিগ বুদ্ধ মন্দির, এলিফেন্ট ট্র্যাকিং পয়েন্ট , হানি ফার্ম, ফুকেট ওল্ড টাউন ও ছালং মন্দির । বিগ বুদ্ধ মন্দির দেখে থাইদের রিচ বুদ্ধিস্ট কালচার সম্পর্কে অবহিত হলাম । সিটি ট্যুরের সবশেষে সাদা হাতির দেশে গিয়ে হাতির সাথে খেলা করা। হাতিকে খাবার খাওয়ানো ও হাতির পিঠে চড়ার বাসনা পূর্ণ করেছিলাম ।

ফেরার সময় থাইল্যান্ডের অনেক ভালো ভালো জায়গা যেমন কেরাবি, জেমস বন্ড আইল্যান্ড, কাটা বিচ ও অনেক ছোটখাটো দ্বীপ ঘোরার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম ।

( লেখকের মতামত নিজস্ব )

Post Comment