সুইটি চন্দ্র, বাঘমুন্ডি:
রাজ্যের নানা প্রান্তে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে যতই সমালোচনা হোক না কেন। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির চড়িদা গ্রামের ললিত সূত্রধর যেন এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। পুলিশের সিভিক ডিউটির পাশাপাশি তিনি জীবন্ত করে তুলছেন ঐতিহ্যবাহী ছৌ মুখোশ শিল্পকে।
প্রায় ১২ বছর ধরে বাঘমুন্ডি থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত ললিতের শিল্পযাত্রা শুরু হয়েছিল মাত্র ১৫ বছর বয়সে, বাবার হাত ধরে। মুখোশ গড়ার এই পারিবারিক ঐতিহ্য তিনি শুধু ধরে রেখেছেন তাই নয়, আধুনিক রঙে রাঙিয়েছেনও। দুর্গা, মহিষাসুর, কার্তিক, গণেশ থেকে শুরু করে কথাকলি, কৃষ্ণ কিংবা খারাপ নজর কাটানোর জন্য নজরকাঠি—তার তুলির টানে প্রতিটি মুখোশই হয়ে উঠছে অনন্য। ললিত জানান, “সিভিক ডিউটির পাশাপাশি যে সময়টুকু পাই, পুরো মন প্রাণ দিয়ে মুখোশ গড়ি। এই শিল্প আমাদের রক্তে মিশে আছে, তাই কখনোই এ থেকে আলাদা হতে পারব না।”
তার হাতে তৈরি মুখোশ আজ শুধু গৃহস্থালির শোভা বাড়াচ্ছে না। স্থানীয় অতিথি আবাস থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরেও দেখা যাচ্ছে তার সৃষ্টির ছাপ। মাসিক সিভিক বেতন যেখানে গড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। সেখানে মুখোশ বিক্রি করেই ললিতের বার্ষিক আয় ছুঁয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শিল্পচর্চার এক অসাধারণ উদাহরণ। ললিতের এই কাজ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।”
শিল্পচর্চায় ললিতের সঙ্গী তার স্ত্রী মিতালী দেবীও। ‘মিতালী ছৌ মুখোশ ঘর’ নামে তাদের ছোট্ট ব্যবসা এখন চড়িদার হস্তশিল্প বাজারে আলাদা পরিচিতি পেয়েছে।
ললিতের মতো আরও অনেক সিভিক ভলান্টিয়ার পুরুলিয়ায় নিজেদের প্রতিভা দিয়ে নজর কেড়েছেন। যেমন বরাবাজার থানার একঝাঁক সিভিক ভলান্টিয়ার ছৌ নাচে মুগ্ধ করেছেন স্থানীয়দের। আবার মানবাজার থানার সিভিক অপু কোটাল সাহসিকতায় এক আহত মহিলার প্রাণ বাঁচিয়ে হয়েছেন জেলার গর্ব। সব মিলিয়ে ললিত সূত্রধর প্রমাণ করেছেন—পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি সৃজনশীলতাও হতে পারে আত্মনিবেদনের এক অনন্য মাধ্যম। যা শুধু পরিবার নয়, গোটা জেলার গর্ব বাড়াচ্ছে ফি দিন









Post Comment