নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া :
একুশে জুলাইয়ের আগে পুরুলিয়ায় শাসক দলে যোগদানের জোয়ার। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বজরং দল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস মিলিয়ে দুই দিনে অন্তত পাঁচশোরও বেশি কর্মী পা রেখেছেন ঘাসফুল শিবিরে। কিন্তু যোগদানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিভ্রান্তি! বজরং দল সাফ জানিয়ে দিল, যাঁরা তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। এর জেরে রীতিমতো চড়েছে রাজনৈতিক পারদ।
বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া শহরে ও শুক্রবার বলরামপুরে এই যোগদান পর্বে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের প্রথম সারির উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার শহরে তিরিশজন বজরং দল ও বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। তাদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন।
শুক্রবার বলরামপুরে সেই সংখ্যাটা পৌঁছায় প্রায় পাঁচশোতে। শুধু বজরং দল নয়, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের কর্মীরাও যোগ দেন বলে দাবি জেলা নেতৃত্বের। উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি রাজীব লোচন সরেন, জেলা চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো, সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো সহ ব্লক নেতৃত্ব।
জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি গৌরব সিং-এর নেতৃত্বেই মূলত এই যোগদান পর্ব বলে দাবি দলের। গৌরব নিজে একসময় বজরং দলের সংগঠক ছিলেন। পরে ২০১৮-র শেষে তৃণমূলে আসেন। তাঁর দাবি, “এটা গেরুয়া শিবিরের কাছে বড়সড় ধাক্কা। তাই এখন ওঁরা বলছেন, ওই কর্মীরা বজরং দলে ছিলেন না।”
কিন্তু শনিবার বজরং দলের পক্ষ থেকে কার্যত পাল্টা বিবৃতি আসে। সংগঠনের নগর সংযোজক অমিতকুমার চৌরাশিয়া বলেন, “বজরং দল একটি অরাজনৈতিক হিন্দু সেবামূলক সংগঠন। যাঁরা তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁদের কেউই আমাদের সংগঠনের সদস্য ছিলেন না। আমাদের নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।”
এই দাবিকে ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা। গৌরব পাল্টা বলেন, “যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁরাই প্রকাশ্যে বলেছেন, তাঁরা বজরং দলের সদস্য ছিলেন। নাম, কর্মসূচি, অনুমতির নথি—সব কিছু রয়েছে।”
প্রাক্তন বজরং নেতা হর্ষ শর্মা বলেন, “আমি দীর্ঘদিন বজরং দলে ছিলাম, নাম ছিল ব্যানারে, কর্মসূচির অনুমতির জন্য নিজেই থানায় গিয়েছি। এখন সেই সংগঠন মানুষের জন্য কাজ করছে না। তাই উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে এসেছি।”
তৃণমূল দাবি করছে, এই যোগদান ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের আগে এক বড় বার্তা। কিন্তু বজরং দলের কটাক্ষ, “যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা কেউই আমাদের লোক নন।”
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, পুরুলিয়ায় এই যোগদানে আদতে কে জয়ী—ঘাসফুল, না গেরুয়া, না কি বিভ্রান্তি?
Post Comment