insta logo
Loading ...
×

গলার নলি কেটে প্রেমের বলি, গুজরাট থেকে ধৃত প্রেমিক

গলার নলি কেটে প্রেমের বলি, গুজরাট থেকে ধৃত প্রেমিক

নিজস্ব প্রতিনিধি , রঘুনাথপুর

ঘর ভাঙতে চাপ দিচ্ছিল প্রেমিকা। সংসার ছেড়ে তার সঙ্গে থাকতে হবে— এই দাবিতেই সম্পর্কের মধ্যে বাড়ছিল টানাপোড়েন। সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতেই প্রেমিকাকে নৃশংস ভাবে খুন করল যুবক। ধারালো ক্ষুর দিয়ে কেটে দিল গলার নলি। পুর শহর রঘুনাথপুরে ওই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরে অভিযুক্ত গা ঢাকা দেয় গুজরাটে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ তাকে পাকড়াও করেছে সুরাট থেকে।

ধৃত অর্জুন ঘোষ ওরফে বামপদ মুর্শিদাবাদের সালার থানার তালিবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে দীর্ঘদিন ধরে অসমে থাকত। বুধবার রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাকে ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

১৮ মে, রঘুনাথপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভন্দুর মোড় এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় মামনি দুবে (৩১)-র রক্তাক্ত দেহ। গলায় ছিল ক্ষুরের গভীর ক্ষত। পুলিশ জানায়, তার স্বামী দেবাশিস দুবে স্থানীয় একটি ইস্পাত কারখানায় কর্মরত। ঘটনার দিন সকালে কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে স্ত্রীর ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ না হওয়ায় বাড়ি ফিরে আসেন।

এদিকে প্রেমিকাকে খুন করার পরেই বাড়ি থেকে বেরোনোর পথে অর্জুনের সঙ্গে দেখা হয় দেবাশিসের। দেবাশিসের পূর্ব পরিচিত অর্জুন জানায়, ‘আসছি একটু পরেই’। দোতলার ঘরে গিয়ে বিছানায় স্ত্রীর রক্তাপ্লুত নিথর দেহ দেখে থমকে যান। খবর দেন থানায়। অর্জুনের ওপর সন্দেহ হওয়ায় দেবাশিস ও মামনির পরিবার পুলিশকে জানায় তার নাম।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মামনির বাপের বাড়ি পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা থানার ধোবাঘাটা গ্রামে। প্রায় ১৪ বছর আগে বিয়ে হয় বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির পঞ্চম্বাডামরা গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিসের সঙ্গে। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। ঘটনার সময় সে মামার বাড়িতে ছিল।

তদন্তে উঠে আসে, কয়েক বছর আগে দুর্গাপুরে থাকাকালীন অর্জুনের সঙ্গে মামনির পরিচয়। অর্জুন সেখানে একটি ঘি-র দোকান চালাত। সেখান থেকেই শুরু হয় সম্পর্ক। দু’জনেই বিবাহিত হলেও, প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। বরং আরও গভীর হয়। অর্জুনের সংসারে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অসমে চলে যায় সে। কিন্তু সম্পর্ক চলতে থাকে।

জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, মামনি চেয়েছিল দেবাশিসকে ছেড়ে অর্জুনের সঙ্গে থাকতে। সেই চাপ সামলাতে না পেরেই এই সিদ্ধান্ত। ১৩ মে অসম থেকে রঘুনাথপুরে আসে অর্জুন। শহরের একটি লজে ওঠে। ১৭ মে মামনিকে জয়চন্ডি পাহাড়ে ডেকে খুনের ছক কষেছিল সে, কিন্তু ভিড় থাকায় ব্যর্থ হয়। ১৮ মে দেবাশিস কাজে বেরিয়ে গেলে মামনির বাড়িতে পৌঁছয়। কথা কাটাটির পর প্রথমে কানের গোড়ায় জোর থাপ্পড়। তারপর গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ। অজ্ঞান হয়ে গেলে ক্ষুর দিয়ে গলার নলি কেটে দিয়ে প্রেমিকাকে খুন করে সে।

এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। জানতে পারে, দুর্গাপুর, হাওড়া হয়ে গুজরাটের সুরাটে গা ঢাকা দিয়েছে অর্জুন। সেখানে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুরুলিয়া পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার পর অভিযুক্ত গুজরাটে পালায়। প্রযুক্তির সাহায্যে তাকে খুঁজে বার করে ধরা হয়েছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকেই এই খুন।”

শহরের মধ্যে এমন নৃশংস খুনে স্তম্ভিত রঘুনাথপুর। চর্চার কেন্দ্রে এখন একটাই প্রশ্ন— এ কী ভালোবাসা না পাগলামি?

Post Comment