insta logo
Loading ...
×

কাঁটার সিংহাসনে বসে ব্যাপক ট্রোলিং এর শিকার তৃণমূল নেতা

কাঁটার সিংহাসনে বসে ব্যাপক ট্রোলিং এর শিকার তৃণমূল নেতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :

জেলা যুব সভাপতি পদে তৃণমূল এমন একজনকে বসিয়েছে রাজনৈতিক মহলে ‘ডাকাবুকো’ বলে পরিচিত তিনি। তবে অতীত রাজনৈতিক পরিচয়ে তিনি তৃণমূল বিরোধীই ছিলেন। ফলে জেলা যুব সভাপতি পদের কাঁটার সিংহাসনে বসে সোশাল মিডিয়ায় যারপরনাই ট্রোলিং এর শিকার হচ্ছেন নব নিযুক্ত তৃণমূল জেলা যুব সভাপতি গৌরব সিং।

নতুন জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল ট্রোলিংয়ের মুখে পড়লেন গৌরব সিং। রাজনৈতিক পরিচয় বারবার বদলের অভিযোগে তাঁর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে, আবার নিশানা করা হয়েছে ভোট কুশলী সংস্থাকেও। সমাজ মাধ্যমে একের পর এক কটাক্ষ ছুটে এসেছে নব নিযুক্ত নেতার দিকে।

গৌরব সিংয়ের রাজনৈতিক যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর হাত ধরে। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক এবং ২০১২-১৪ পর্বে জেলা সভাপতি। এরপর হঠাৎ মোড় নেয় তাঁর পথ। ২০১৮ সালে বজরং দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর হিসাবে উঠে আসেন তিনি। সেই বছরই তৃণমূলে যোগ দেন এবং শহর যুব সভাপতির দায়িত্ব পান।

এই পট পরিবর্তন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষের বন্যা—

“ভজহরি মাহাতোর জেলায় যুব নেতা শেষে কিনা সিং? হাই রে ছোট আরএসএস!”
“চেলিয়ামা ব্লকে বজরং দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতা আজ তৃণমূলের যুব জেলার শীর্ষ পদে! পুছতা হ্যায় পুরুলিয়া।”

এই সব মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক পরিসরে আরও বাড়ছে চাপানউতোর।

ট্রোলিং প্রসঙ্গে গৌরব সিং সংবাদমাধ্যমে বলেন, “আমাকে তৃণমূলে আনা হয়েছিল, কাজ করার সুযোগ না দিলে চলবে কীভাবে? আমি শহর যুব সভাপতির দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি। এখন জেলায় এসেছি। চেষ্টা করব মন দিয়ে কাজ করতে।” বজরং দলের সঙ্গে তাঁর যুক্ত থাকার প্রসঙ্গে বলেন, “আমি বিজেপিতে ছিলাম না, একটি হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অতীত নিয়ে বেশি না ভেবে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে তাকানো উচিত।”

তবে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব তাঁর এই মন্তব্যকে সম্পূর্ণ সমর্থন করছে না। দলের একাংশের মতে, এমন একজন নেতার জেলা যুব সভাপতির পদে উঠে আসা অনেক পুরনো নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে পারে।

জেলা যুব সভাপতির পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন বিকাশ মাহাতো— শিক্ষক নেতা ও যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে লিখেছেন, “প্রথমে সিপিআই(এম), তারপর বিজেপি, তারপর তৃণমূল। এতেই কেল্লাফতে, বাকি দায়িত্বে আইপ্যাক!”

ভোট কুশলী সংস্থা ‘আইপ্যাক’-কে ঘিরেই উঠছে অভিযোগ— পর্দার আড়ালে কারা নেতা হবেন, কারা সরবেন, সবই যেন নির্ধারণ করছে তারা।

পুরুলিয়া জেলার সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা ছিল একেবারে কেন্দ্রে। সেই আন্দোলনের অগ্রদূত ভজহরি মাহাতোর স্মরণে অনেকেই কটাক্ষ করছেন, এই নিয়োগ যেন সেই ইতিহাস ও আবেগের ‘অসম্মান’।

একদিকে তৃণমূল চাইছে জনভিত্তি মজবুত করতে, অন্যদিকে বেছে নিচ্ছে এমন নেতৃত্ব যাঁদের অতীতে দলবদলের ইতিহাস আছে— এই দ্বৈত রণনীতি নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন গৌরব। একবার শহর তৃণমূলের অনুষ্ঠানে পুরসভার ১৭ জন কাউন্সিলর অনুপস্থিত থাকায় তিনি তাঁদের ‘ভাইরাস’ বলে অভিহিত করেন, যা নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ জন্মায়।

এছাড়াও, জেলা মহিলা তৃণমূল সভাপতি পদেও রদবদল হয়েছে— সুমিতা সিং মল্লকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন সিপিএম নেত্রী মিনু বাউরিকে। যদিও সুমিতাকে রাজ্য মহিলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের জেলা সভাপতির পদে বহাল রয়েছেন বিতর্কিত নেতা উজ্জ্বল কুমারও।

কাঁটার সিংহাসনে বসে আছেন গৌরব, দলীয় অন্দরে দানা বাঁধছে অনিশ্চয়তা। নেতাকর্মীদের একাংশ মনে করছে,
“একাধিক পরিচয় বদলে আসা কোনও নেতার হাতে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব কতটা নিরাপদ?”

তৃণমূল তাঁকে ‘ডাকাবুকো’ যুবনেতা হিসেবে তুলে ধরছে, কিন্তু পুরুলিয়ার বাস্তব রাজনীতিতে এটাই বড় প্রশ্ন— এই ডাক কতটা গন্তব্যের দিকে যাবে, আর কতটা ঘুরপথেই থেকে যাবে?

Post Comment