নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
জলে ভাসছে একের পর এক লাশ। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। চাঞ্চল্য পুরুলিয়ার ঐতিহ্য সাহেব বাঁধ ঘিরে।
পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধে জলদূষণ ঘিরে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জলাশয়ের সঙ্গে যুক্ত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় নোংরা জল সরাসরি বাঁধে প্রবেশ করছে। তার ফলেই গত কয়েকদিন ধরে মৃত্যু ঘটছে ছোট-বড় বহু মাছের। জলাশয়ের পাড়ে এসে জমছে মৃত মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পরিস্থিতির জেরে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে মাছচাষের দায়িত্বে থাকা ফিস প্রোডাকশন গ্রুপ। তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত অন্তত সাত থেকে আট লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই জলাশয়টি আগে কচুরিপানায় আচ্ছাদিত থাকলেও, তা পরিষ্কার রেখে মাছ চাষের উদ্দেশ্যে ফিস প্রোডাকশন গ্রুপকে লিজে দেওয়া হয়। শর্ত ছিল, মাছ চাষ করে তারা মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি জলাশয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। কিন্তু নোংরা জল ঢুকে যাওয়ার কারণে একের পর এক মাছ মরতে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রোডাকশন গ্রুপ চুন, হলুদ, নুন ইত্যাদি জলে ছড়ালেও, কোনও ফল মেলেনি।
ফিস প্রোডাকশন গ্রুপের অভিযোগ, একাধিকবার মৎস্য দপ্তর ও পুরসভাকে জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদিও পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি জানান, “বিষয়টি আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি। আগে জল পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই কম। মনে হচ্ছে, সাহেব বাঁধের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এটি মিউনিসিপাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেটের তত্ত্বাবধানে৷ তাই এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে বিষয়টি দেখার জন্য জানানো হবে। পাশাপাশি মৎস্য দপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে মৎস্য দপ্তরের ভূমিকাও। কারণ, ফিস প্রোডাকশন গ্রুপ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই লিখিত আকারে দপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছিল। অথচ সহকারী মৎস্য অধিকর্তা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি। খুব শীঘ্রই আমাদের টিম পরিদর্শনে যাবে এবং জল পরীক্ষা করবে।”
এদিকে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি একটি বেসরকারি এজেন্সির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেই এজেন্সিকে শীঘ্রই তলব করা হতে পারে বলেও সূত্রের খবর।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ সচেতন মহলের প্রশ্ন, একদিকে প্রশাসনের এমন ঢিলেমি আর অন্যদিকে কার্যত নজরদারির অভাবে জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের মুখে। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না হলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
Post Comment