দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
কখনও রোদ, আবার কখনও বৃষ্টি। এ যেন লুকোচুরি খেলা। মিশ্র আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পুরুলিয়ার ধান চাষিরা। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে মার খাচ্ছে কৃষকদের বীজতলার কাজ। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় চলে এলেও পুরুলিয়ার অধিকাংশ ব্লকের কৃষকরা বীজতলার কাজ শুরুই করতে পারেননি। ফলে সঠিক সময়ে বর্ষা নামলেও চারার কারনে ধান রোপণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় তারা।
জেলাতে তেমন জলসেচের ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বৃষ্টির উপর ভরসা করে খরিফ মরসুমে আমন ধান চাষ করে থাকেন কৃষকরা। সাধারণত জুন ও জুলাই মাসে ধান চারা থেকে রোপন করে থাকেন। চাষিরা জানান, নিম্নচাপের আগে বৃষ্টির অভাবে তারা বীজতলার কাজ করতে পারেননি। যারা সামান্য কিছু জমিতে বীজ ফেলেছিলেন, নিম্নচাপের বৃষ্টিতে সেই বীজ নষ্ট হয়েছে। আবার নতুন করে বীজ ফেলার কাজ করতে হবে।

সাধারণত জেলার সিংহভাগ চাষিই ১৩ই জৈষ্ঠ্য রহিন পরব থেকে বীজ বপনের কাজ শুরু করেন। তারপর ধাপে ধাপে বীজ বপনের কাজ চলে। জেলাতে কৃষকরা দু’ভাবে বীজ তলার কাজ করে থাকেন। শুকনো মাটিতে। এছাড়া কাদা মাটিতেও বীজতলার কাজ চলে। তবে শুকনো মাটিই বীজ বপনের উৎকৃষ্ট। আর কাদা মাটিতে বীজ ফেললে পরবর্তী কালে প্রচুর জলের প্রয়োজন পড়ে । জল না পেলে সেই বীজ বার হয় না । মাটি শুকিয়ে গেলেই বিপদ। তাছাড়া কাদা মাটিতে বীজ গুলো উপরে থাকার কারণে পাখিতে খেয়ে ফেলে। তাই কৃষকরা কাদা মাটিতে “আছড়ানো ” বীজ বপন করতে চান না। চাষিরা জানান,বর্ষার শুরুতেই নিম্নচাপের পর থেকে আকাশ সেইভাবে পরিষ্কার হয়নি। কখনও বৃষ্টি, আবার কখনও রোদ। এতেই বিপাকে পড়েছেন তারা। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় তারা বীজতলার কাজ শুরু করতে পারছেন না। তাকিয়ে রয়েছেন আকাশের দিকে ।কবে থেকে আকাশ পরিষ্কার হবে? সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন চাষিরা। তুম্বাঝালদা গ্রামের কৃষক চিত্তরঞ্জন মাহাত বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে তারা বীজতলার কাজ শুরু করতে পারছেন না । আবহাওয়া পরিষ্কার হলেও জমি শুকোতে ১০-১২ দিন সময় লাগবে। ফলে দোলাচলের মধ্যে রয়েছেন। এদিকে আবার ধান লাগানোর দিন চলে আসছে। জানি না কি হবে। একই বক্তব্য আহাড়রা গ্রামের ধানচাষি অক্ষয় মাহাতোর। তিনি বলেন, লাগাতার কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বীজ ফেলার জন্য উপযোগী মাটি তৈরি হয়েছে বটে। তবে পরে বৃষ্টি না হলে খুব সমস্যায় পড়তে হবে। তাই চিন্তার মধ্যেই রয়েছি।
আড়শা ব্লকের এক কৃষি আধিকারিক জানান, প্রথম দিকে চাষিরা বৃষ্টির অভাবে বীজ বপনের কাজ শুরু করতে পারেননি। নিম্নচাপের পর থেকে আকাশ সেই ভাবে পরিষ্কার হয়নি। জমিতেই জমে রয়েছে জল। কোথাও কোথাও চাষিরা কাদা মাটিতেই বীজ বপনের কাজ শুরু করেছেন। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
Post Comment