সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া:
মাটি, খড়, বাঁশ আর কাঠের সঙ্গে এবার দেবীর সাজসজ্জার অস্ত্রগুলোর দামও বেড়েছে। পিতল হোক বা টুকরো টিনের তৈরি, মায়ের হাতে পড়তেই সব চকচক করে ওঠে।
দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের জন্য দেবতাদের কাছ থেকে নানা অস্ত্র পান। প্রতিটি অস্ত্র শুধুই যুদ্ধের উপকরণ নয়—এগুলো আধ্যাত্মিক শক্তি, জ্ঞান ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। শিবের ত্রিশূল ধৈর্য ও ন্যায়, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র লক্ষ্যস্থিরতা, বরুণের শঙ্খ প্রাকৃতিক ভারসাম্য, যমরাজের গদা ন্যায়বিচার, ইন্দ্রের বজ্রাস্ত্র তেজের প্রতীক। গণেশের খড়্গ জ্ঞান, ব্রহ্মার পদ্ম, পরশু, কমণ্ডলু ও অক্ষমালা অন্তর্দৃষ্টি ও বিশুদ্ধতা, কুবেরের নাগপাশ ও ঢাল নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা, সূর্যের তীর ও ধনুক সাহস ও আলোর প্রতীক। প্রতিটি অস্ত্রই শক্তি, জ্ঞান ও ধার্মিকতার মিলিত রূপ।
আজকাল এই দশ অস্ত্র প্যাকেটে বন্দি করে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ প্যাকেটের দাম জেলার সাজসজ্জা দোকানে ৬০ থেকে ২১০ টাকা। গুণগতমানের ভালো টিন বা অস্ত্রভর্তি প্যাকেটের দাম ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রতিমার উচ্চতা অনুযায়ী প্যাকেটের নম্বর থাকে। ২ ফুটের প্রতিমার জন্য এক নম্বর, ৩ ফুটের জন্য দুই নম্বর। ৩-৫ ফুট প্রতিমার জন্য তিন থেকে পাঁচ নম্বর, ৫ ফুট প্রতিমার জন্য ৬-৮ নম্বর। দাম যথাক্রমে ১১০, ১২০, ১৩০ টাকা। সাড়ে পাঁচ থেকে ছ ফুট প্রতিমার জন্য ৯-১০ নম্বর, দাম ১৫০-১৯০ টাকা। সাত থেকে নয় ফুট প্রতিমার জন্য ১১-১২ নম্বর, দাম ১৯০-২১০ টাকা। ভালো মানের এক নম্বর অস্ত্র প্যাকেট ৫-৮ ফুট মূর্তির জন্য, দাম ৭৫০ টাকা। ৮-১০ ফুট মূর্তির জন্য ব্যবহার করা হয় ২ নম্বর প্যাকেট, দাম ৯৫০ টাকা।
বাঘমুন্ডির মুখোশ গ্রাম চড়িদার সাজসজ্জা দোকানের মালিক স্বপন রায় বলেন, “দেবীর হাতে থাকা দশ অস্ত্র, গণেশ ও কার্তিকের হাতে থাকা অস্ত্র, সরস্বতীর বীণা ও লক্ষ্মীর পদ্মফুল—সবই প্যাকেটে থাকে। দাম গুণমান অনুযায়ী। সাধারণ মানের দাম ৬০-২১০ টাকা, ভালো মান ৭৫০-৯০০, বিশেষ মান ১২০০ টাকা।”
মঙ্গলময়ী দেবী দশপ্রহরণধারিণী হয়ে ওঠেন বিভিন্ন দেবতার দেওয়া অস্ত্রে। আজ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে সেই অস্ত্র টিন দিয়ে তৈরি হয়ে বিক্রি হয়। পুরুলিয়া শহর হোক বা বাঘমুন্ডি থেকে কলকাতার কুমোরটুলি, বড়বাজার—সব জায়গায় টিনের অস্ত্রের বাজার। গতবারের তুলনায় এবার প্রত্যেকটির দাম ৫ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে।
শুধু টিন নয়, বড় মণ্ডপ বা অভিজাত বাড়িতে পিতলের অস্ত্র কেনা হয়। বিসর্জনের সময় নদীতে বা পুকুরে ফেলা হয় না, বরং পুনর্ব্যবহার হয়। আবার অনেকে বিসর্জন দিয়েই দেন। পরের বছর নতুন অস্ত্র পান দেবী। বেশিরভাগ মৃৎশিল্পী টিনের অস্ত্র দিয়ে জগজ্জননীকে সাজান। যারা সাজসজ্জার ব্যবসা করেন তারা কুমোরটুলি, বড়বাজার থেকে টিনের অস্ত্র কিনে এনে জেলায় বিক্রি করেন। মৃৎশিল্পীদের মধ্যে যারা বড় বরাত পান, তারা সরাসরি কুমোরটুলিতে যান।
পুরুলিয়া শহরের মৃৎশিল্পী ফকির পাল বলেন, “প্রতিমার কাঁচামালের দাম বাড়ছে। বরাত অনুযায়ী প্রতিমার দাম বেশি বাড়ানো যায় না। আমরা একবারে কুমোরটুলি থেকে কিনে নিয়ে আসি। খুব একটা বড় নয়, এমন প্রতিমার জন্য পিতলের অস্ত্রশস্ত্র কিনতে হলে দাম পড়বে ৫-৬ হাজার টাকা।”
অস্ত্র ছাড়া কল্পনা করা যায় না দশপ্রহরণধারিণীকে। দাম বেশি হোক বা কম, মূর্তি তৈরিতে অস্ত্র এখানে মাস্ট।
Post Comment