দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
একসময় পুজো এলেই নাওয়া খাওয়ার সময় থাকতো না তাদের । বাড়িতে তৈরি হত প্রতিমার চালের সাজ, ডাকের সাজ, মুকুট, হার। থিমের বাজারে ডাকের সাজের জন্য তেমন আর ডাক পড়ে না শিল্পীদের। তাই, পুজো এলেও বিষাদের সুর আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রামের যোগীপাড়ায়। কারন থিমের বাজারে কদর নেই ডাক শিল্পের।
জেলার যে কয়েকটি গ্রামে ডাক শিল্পের কাজ হয় তার অন্যতম আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রাম। গ্রামের ২০ টি পরিবার বংশানুক্রমে ডাক শিল্পের সাথে যুক্ত। একসময় বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব দুর্গা পূজা এলে তাদের নাওয়া খাওয়ার সময় থাকতো না। বাড়িতেই তৈরী হতো প্রতিমার চালসাজ,মুকুট,হার ,কানপাশা।তারা প্রতি বছর মা উমার অঙ্গসজ্জা করে মাতৃ প্রতিমায় ফুটিয়ে তোলেন দুর্গতিনাশিনীর রূপ। কিন্তু এখনও সেই ভাবে বরাত না পাওয়ায় মন ভালো নেই তাদের । অভাব গ্রাস করেছে পরিবারগুলিকে। ডাকশিল্পী দিলীপ যোগী, ,পাগল যোগী ,স্বপ্ন যোগী প্রমুখ বলেন, “সারাবছর আমরা এই পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকি। বর্তমানে থিমের বাজারে ডাকের কাজের ব্যবহার করেন না উদ্যোক্তারা। ফলে আমাদের কাজেও টান ধরেছে।”
থিম পুজার দাপটের ডাকের কদর কমেছে বলে শিল্পীদের একাংশের অভিমত। তাদের মতে হাতে গোনা কয়েকটি পারিবারিক পুজোয় এখনও ডাকের সাজে প্রতিমা সাজানো হয়। সেই পুজো কমিটিগুলো ডাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাছাড়া ডাক শিল্পে খুব সূক্ষ্ম কাজ থাকে। ফলে পরিশ্রম অনেক বেশি করতে হয় । সেই অনুপাতে উদ্যোক্তারা টাকা দিতে চান না । তাদের দাবি, সরকারি সাহায্য ছাড়া আর এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন ।
যে কয়েকটি পরিবার এই পেশা ধরে বসে আছে তারাও এই বছর বরাত তেমন না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে। তাই মুখে হাসি নেই যোগী পরিবারগুলির। “অথচ কয়েক বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না।জেলার বিভিন্ন ব্লক তো বটেই ,বরাত আসত পড়শি রাজ্যের ধানবাদ,রাঁচি ,রামগড় থেকেও। পুজো কমিটিগুলো নিজেরাই এসে যোগাযোগ করত। কিন্তু সেই সব দিন এখন অতীত।” আক্ষেপ ঝরে পড়ে ডাকশিল্পী দিলীপ যোগীর গলায়।
একসময় যাদের হাতে তৈরি শিল্পেই ফুটে উঠত দুর্গতিনাশিনীর রূপ, আজ থিমের দাপটে তারাই পড়েছে পিছিয়ে। আর কয়েকদিন পর পুজো এলেও বিষাদ নেমে এসেছে যোগীপাড়ায়।











Post Comment