insta logo
Loading ...
×

এবার পুরুলিয়ায় অভয়ারণ্য ?

এবার পুরুলিয়ায় অভয়ারণ্য ?

বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, বান্দোয়ান :

ওড়িশা – ঝাড়খন্ড যা পারেনি তা করে দেখিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বনদপ্তর। ঘুম পাড়ানি গুলিতে জিনাতকে কাবু করে বাঘবন্দিতে পেয়েছে সাফল্য। এই সাফল্যকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাই এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, সুন্দরবন মিলিয়ে আরও ৫২ জনকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাক্ষরিত শংসাপত্র তুলে দেওয়া হলো। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ থেকে বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার হাত দিয়ে বিশেষ শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয় বাঘবন্দি অভিযানে অংশগ্রহণকারী বনদফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক সহ অন্যান্য বনকর্মীদের হাতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায়।

বান্দোয়ান যমুনা বনাঞ্চলের কুইলাপাল বনক্ষেত্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যাঁদের হাতে বনমন্ত্রী শংসাপত্র তুলে দেন সেই তালিকায় রয়েছেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামের ডিএফও, এডিএফও, রেঞ্জ অফিসার, ডেপুটি রেঞ্জার, হেড ফরেস্ট গার্ড, ফরেস্ট গার্ড, অরণ্যসাথী, ফরেস্ট ভলান্টিয়ার, বন সহায়ক, দিনমজুর, ভলান্টারি সার্জেন, যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্য এমনকি বাঁকুড়ার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, মহকুমাশাসক, ইন্সপেক্টর, কনস্টেবল, গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক ও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারও।

এছাড়া জিনাতকে শেষ মুহূর্তে কাবু করা সুন্দরবনের বন কর্মীরাও রয়েছেন। এর আগে গত শুক্রবার কলকাতায় রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায়, মুখ্য বনপাল (মধ্যচক্র) সিঙ্গারাম কুলান্দ্রাইভাল, সুন্দরবনের সজনেখালির বিট অফিসার তথা জিনাতকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের হাতে মুখ্যমন্ত্রী স্বাক্ষরিত শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। আর এই শুক্রবার বান্দোয়ানে আরও ৫২ জনকে দেওয়া হলো সাহসিকতার স্বীকৃতি।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, বান্দোয়ান বিধানসভার বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন, রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায়, মুখ্য বনপাল (পূর্ব চক্র ), মুখ্য বনপাল (মধ্যচক্র) সিঙ্গারাম কুলান্দ্রাইভাল, মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার, বিজয় শালী মাথন সহ পুরুলিয়া বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম জেলার ডিএফও, এডিএফও সহ অন্যান্য আধিকারিক ও বনকর্মীরা।

রাজ্যের বনবিভাগের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন,”জঙ্গল বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাংলায় বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৫- র ব্যাঘ্র গণনা অনুযায়ী বাংলায় বাঘের সংখ্যা ১০২।”
বনমন্ত্রী যখন বান্দোয়ানে বাঘবন্দির সাফল্যে পুরস্কৃত করছেন জিনাত বন্দিতে অংশগ্রহণকারীদের, তখন জিনাতের আশিক বানজারা বাঘ বেফিকির ঘুরে বেড়াচ্ছে বান্দোয়ানে।
শুক্রবার সকালে জিনাত ও তার সন্ধানে আসা প্রেমিক বাঘের ডেরা রাইকা পাহাড়ের জঙ্গল পরিদর্শন করে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় জানান, আগামীদিন ওই জঙ্গলকে ‘ইনভায়োলেট’ (বন্যপ্রাণের জন্য সুরক্ষিত) বলে ঘোষণা করা হবে। কারণ বাঘিনী জিনাত থেকে তার আশিক গত ২ মাসে এই রাইকাতে ঘাঁটি গাড়লেও ওই বন্যপ্রাণকে কোনরকম উত্ত্যক্ত করেননি এলাকার মানুষ।

সম্প্রতি ব্যাঘ্র সুমারিতে দেখা গেছে বাংলা জুড়ে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা।
সুমারিতে বাংলায় আছে ১০২টি বাঘ। এর মধ্যে সুন্দরবনে ১০১টি ও আরেকটি রয়েছে উত্তরবঙ্গের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে। জিনাতের আশিক বাঘটি এবারও কোন এলাকার ব্যাঘ্র সুমারিতেই স্থান পায়নি। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় বলেন, “ব্যাঘ্র সুমারিতে নাও ধরা পড়তে পারে। তবে ওই বাঘ এখন পশ্চিমবঙ্গের। রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলের যা চরিত্র তাতে বাঘ থাকার আদর্শ। অতীতেও যদি বাঘ এসে থাকে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাঘ সেই জঙ্গলেই থাকে যেখানে নিজেকে সে আড়াল করতে পারবে। তা রয়েছে রাইকায়। এখানকার জঙ্গল এতটাই ঘন যে ১০ মিটার দূরে আর কিছু
দেখা যায় না। পুরুলিয়ার জঙ্গলে যেভাবে বন্যপ্রাণরা ফিরে আসছে তাতে আগামীদিনে অভয়ারণ্য হতেই পারে।”
এদিকে পুরুলিয়ার জঙ্গল নিত্যনতুন বণ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ হওয়ায় তাদের মোকাবিলায় বন দফতরের পরিকাঠামো বাড়াতে চলেছে রাজ্য। চার চাকার গাড়ি, মোটরবাইকের পাশাপাশি জাল, ট্রাঙ্কুলাইজার গান সেই সঙ্গে রেঞ্জ আধিকারিকদের হাতে সার্ভিস গান ফিরিয়ে দেওয়ারও ইঙ্গিত এদিন দিয়েছেন বনমন্ত্রী।

Post Comment