নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
আপাতত বাঘবন্দি অভিযান নয়। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বাঘবন্দি আপাতত বন্ধ রাখছে বন দফতর। ঝাড়খন্ডে হাতি তাড়াতে গিয়ে যথেচ্ছ পটকা ও হুলা পার্টির ব্যবহারে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিরক্ত হয়ে যে আবার বাংলায় ঢুকে পড়েছে। এখন সে বাঁকুড়ার বাগডুবিতে। হাতি তাড়ানোর মতো করে বান্দোয়ান থেকে ঝাড়খণ্ডে ফিরে যায় জিনাতের আশিক। আবার সেই ঝাড়খন্ডে পটকার শব্দেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলায় চলে আসে বাঘ নামের বিপদ। বন দফতরের এই ভূমিকা তীব্র সমালোচিত হয়েছে পরিবেশপ্রেমীদের কাছে।
প্রশ্ন ওঠে কোন বন্যপ্রাণকে বন্দি করতে বা খেদাতে এভাবে অভিযান চালানো কি উচিত? সুপ্রিম কোর্টতো হাতি তাড়াতেও হুলা পার্টি নিষিদ্ধ করেছে। সেখানে বাঘ বন্দি অভিযানে হুলা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে?

বাঘটি যে কোনমতেই নরখাদক নয়, উপলব্ধি করেছে বন দফতর। গত ২৫ দিনে বাংলা ও ঝাড়খন্ডে এই বাঘটির সঙ্গে যারা মুখোমুখি হয়েছেন সেই সকল প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই বাঘটির পাশ দিয়ে তারা চলে গেলেও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার গ্রাহ্যই করেনি।
আপাতত জিনাতের আশিকের অবস্থান বাঁকুড়া জেলায়। সেখানের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে জিনাতের আশিক। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকের বাঁশপাহাড়ি রেঞ্জ এলাকা হয়ে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় ঢুকেছে ওই বাঘ। আপাতত অভিযানের পথে হাঁটবে না রাজ্য। শুধু নজরদারি চালাবে। যাতে লোকালয়ে বাঘটি না চলে আসে। মানুষজনের কোন ক্ষতি না হয় সেই লক্ষকেই এখন সামনে রাখছে বন দফতর। বাঘটির কোন বিপদ যাতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখবে বনদপ্তর। ঝাড়খন্ডের জামশেদপুর বনবিভাগের ঘাটশিলা বনাঞ্চল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ঝাড়গ্রাম হয়ে বাঁকুড়া যাওয়ার পথে তার অসংখ্য পদচিহ্ন শুক্রবার সকালের দিকে নজরে আসে। বনদপ্তর থেকে ঝাড়গ্রাম ও দক্ষিণ বাঁকুড়ায় মাইকিং চলছে।

বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টা ৩৫ নাগাদ বেলপাহাড়ির আমঝরনায় ট্র্যাপ ক্যামেরায় তৃতীয়বার ধরা দেয় ওই দক্ষিণরায়। তার আগে গত ১৮ ও ১৯ শে নভেম্বর পরপর দুদিন বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়তলির যমুনাগোড়ায় ভোরের দিকে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিল।
রাজ্যের বনবিভাগের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, “বাঘ ঝাড়খণ্ড থেকে ফের বাংলায় ঢুকেছে। বেলপাহাড়ির জঙ্গলে তার ছবি পাওয়া গিয়েছে। বাঘটির উপর নজরদারি রয়েছে। তবে বাঘটি ঝাড়খণ্ডের ভেতরে ঢুকে গেলেও সেখানে হাতি তাড়াতে ঝাড়খন্ড বনবিভাগ যথেচ্ছ পটকা ও হুলা ব্যবহার করাতেই আবার বাংলায় চলে আসে এমনই অভিযোগ রাজ্যের বনকর্তাদের।
এই বাঘ-বন্দি অভিযানের তত্ত্বাবধানে থাকা রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র ) সিঙ্গরম কুনাল ডাইভেল বলেন, ” দক্ষিণ বাঁকুড়ায় বাঘের পায়ের ছাপ আমরা পেয়েছি। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ক্ষেত্রে এক রাতে ৪০ কিমি হাঁটা অস্বাভাবিক নয়। বাঘটি ঘাটশিলা বনাঞ্চলের ডাইনমারি থেকে বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগে প্রবেশ করতে তাকে হাঁটতে হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার। ঝাড়খন্ডে হাতি তাড়াতে ভীষণভাবে পটকা ফাটানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যবহার হচ্ছে হুলা। তাই বাঘটি ঝাড়খন্ডের ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পরেও আবার বাংলায় চলে এলো।”
বাঘবন্দি অভিযানের তত্ত্বাবধানে থাকা রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) সিঙ্গরম কুলানডাইভেল বলেন, “আমরা আপাতত বাঘ-বন্দি করতে কোন অভিযান করছি না।মানুষজনকে সচেতন করছি। বাঘের দেখা মিললে যেন আমাদেরকে খবর দেওয়া হয়। তাছাড়া বাঘের উপরেও আমাদের নজরদারি রয়েছে।”
Post Comment