অমরেশ দত্ত, মানবাজার :
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যের ছাব্বিশ হাজার শিক্ষকের চাকরি যেতেই সম্পূর্ণ অন্য সমস্যায় পড়েছে জেলার স্কুলগুলি। ছাত্র সংখ্যা অনুপাতে এমনিতেই শিক্ষক ছিল কম। এখন ঘাড়ে সংক্রান্তি বিদ্যালয়গুলির। বহু স্কুলেই চলছে প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন। পরীক্ষা নেবেন কারা? খাতা দেখবেন কারা? এই সব প্রশ্ন নিয়ে বিরাট বিপদে জেলার শিক্ষায়তনগুলি।
মানবাজার স্বপন সুব্রত হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নীলোৎপল দত্ত বলেন, “আমাদের স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে প্রায় ১৭০০ ছাত্রছাত্রী। আছেন ২২ জন শিক্ষক। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ৩ জন। এই অবস্থায় বিরাট বিপদে পড়েছে স্কুল। এখন প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন চলছে। খাতা দেখা এবং পরবর্তীতে ক্লাস চালানোর ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যায় পড়ব।” তিনি জানান, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরদিন ওই তিনজন শিক্ষক এসেছিলেন। তারপর থেকে আর আসছেন না। আমি ফোন করেছিলাম। ওঁরা বলেছেন সংগঠনগত ভাবেই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। “
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খোদ টিচার-ইন-চার্জের চাকরি চলে যাওয়াই বিপাকে পড়েছে একের পর এক স্কুল! মাথায় হাত পড়েছে স্কুলের পরিচালন সমিতি থেকে অভিভাবক, এবং পড়ুয়াদের।
পুরুলিয়ায় এমনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে একজন মাত্র শিক্ষক। বাকিরা গেস্ট টিচার। সেই একমাত্র শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় টিচার- ইন-চার্জের দায়িত্ব কি সেই অতিথি শিক্ষকদের দেওয়া হবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন
সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির পরিচালন সমিতি থেকে শিক্ষা দপ্তরে।
কাশিপুর ব্লকের আহাত্তোড় জুনিয়র হাইস্কুলের কথাই ধরা যাক। সেখানকার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বাঁকুড়ার কেন্দুয়াডিহি-র বাসিন্দা অভিষেক প্রসাদের চাকরি চলে গেছে। এখন ওই স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ-র দায়িত্ব কে সামাল দেবেন বুঝতে পারছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের বাকি দু’জনই গেস্ট টিচার। একই অবস্থা জয়পুরের উপরকাহান আপার প্রাইমারিতেও। সেখানকার টিচার-ইন-চার্জ
রাজীব মন্ডলের চাকরি গিয়েছে। তিনি এসএসসিতে নবম-দশম শ্রেণীর উত্তীর্ণ জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তবে স্কুলের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা চোখে পড়ার মতো। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও স্কুলে যাচ্ছেন তিনি। ছাত্র পড়াচ্ছেন। টিচার ইনচার্জ যে যে দায়িত্ব পালন করেন, সবই করছেন। তার কথায়, ” এখনও তো শিক্ষা দপ্তরের কাছ থেকে কোন নোটিশ পাইনি। তাই স্কুলে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আমি টিচার-ইন-চার্জ। অন্যের হাতে দায়িত্ব না সঁপে এভাবে তো চলে যেতে পারবো না। একটা তো দায় থেকে যায়। সেই কারণেই আমি স্কুলে যাচ্ছি। “
রঘুনাথপুরের এমএম হাই স্কুলের অবস্থাও একই রকম। এখানকার টিচার ইনচার্জ সুকুমার পাত্র। সংস্কৃতের এই শিক্ষক প্রাথমিকের চাকরি ছেড়ে তিনি এখানে যোগ দেন। তার চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি আর স্কুলে যাচ্ছেন না। ফলে সমস্যায় পড়েছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
Post Comment