নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া :
সাড়ে তিন ঘণ্টার টানা ধুন্ধুমার বৈঠক। আর সেই বৈঠকের সারমর্ম কী? প্রশ্নের সরল উত্তর, পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালির বিরুদ্ধে কার্যত অনাস্থা। পরিষেবা ব্যাহত হওয়া থেকে প্রশাসনিক অচলাবস্থা—সবকিছুর দায় একযোগে চেয়ারে বসা প্রধানের ঘাড়েই চাপালেন তৃণমূল–সহ বিরোধী কাউন্সিলররা।
নগরোন্নয়ন দপ্তরের শো-কজের জবাব সাত দিনের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ ছিল পুরুলিয়া পুরসভাকে। কেন পুরসভা ভেঙে দেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে সেই জবাব পাঠালেও বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়। অভিযোগ ওঠে, এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে ‘চেয়ারম্যান–ইন–কাউন্সিল’-এর বৈঠকই ডাকেননি পুরপ্রধান। সেই অভিযোগের চিঠিও পৌঁছয় মন্ত্রক থেকে। তড়িঘড়ি বোর্ডের বৈঠক ডাকতেই হয় নবেন্দুকে।
প্রথমে তৃণমূল কাউন্সিলরদের বড় অংশই বৈঠকে না-যাওয়ার পক্ষে অটল থাকলেও শেষ পর্যন্ত জেলায় থাকা মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার হুইপে তাঁরা বৈঠকে হাজির হন। কিন্তু বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন পুরপ্রধান নিজেই। কী ভাবে বোর্ড বাঁচানো যায়, তার কোনও আলোচনা নয়, আক্রমণের মুখে পড়েন প্রধান। পরিষেবা ব্যাহত, পানীয় জলের সংযোগ না-থাকা, আবর্জনা পরিষ্কারে গাফিলতি, সব ক্ষেত্রেই দোষারোপ করা হয় তাঁকে।
পুরসভার গান্ধী হলে সোমবার বৈঠকের শুরু থেকেই তপ্ত পরিবেশ। উপ- পুরপ্রধান ময়ূরী নন্দী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমি ঘোষ সহ একাধিক কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, পুরপ্রধান ‘একাই’ সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বোর্ডকে অন্ধকারে রেখে কাজ চালিয়েছেন। মৌসুমি জানান, তাঁর ওয়ার্ড সহ ৬, ৯, ২৩ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পানীয় জলের সংযোগ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। নির্মল বন্ধু কম, ট্রাক্টর কেনা হলেও আবর্জনা পরিষ্কারে ব্যবহার হয়নি। জবাবে পুরপ্রধান জানান, পানীয় জলের বিষয়টি মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেট দেখে।
বিরোধীদের পাশাপাশি তৃণমূল কাউন্সিলরদের বড় অংশেরই একই অভিযোগ, পুরপ্রধানের ‘একচ্ছত্র’ সিদ্ধান্তে প্রশাসন দুর্বল। বৈঠকের রেজোলিউশনে তাই সরাসরি বলা হয় পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে, দায়িত্ব পুরপ্রধানের। সেই রেজোলিউশনের নানান পয়েন্টই শোকজের উত্তরে পাঠানো হয়েছে। ফলে বোর্ড ভেঙে যাওয়া এখন “সময়ের অপেক্ষা”—এমনটাই ইঙ্গিত পুরসভা সূত্রের।
বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন শাসকদলের দুই কাউন্সিলর—৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভাসরঞ্জন দাস ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের রবিশঙ্কর দাস। অনুপস্থিত ছিলেন বিজেপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবির সেনগুপ্তও। বাকিরা হাজির।
শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার পর পুরপ্রধান শুধু এতটুকুই জানান—“শো-কজের উত্তর মেল করে পাঠানো হয়েছে।” এর বাইরে একটি শব্দও আর উচ্চারণ করতে চাননি তিনি। কাউন্সিলররাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
এদিকে শো-কজের চিঠি আসার পর ১৯ নভেম্বর থেকে পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন পরিষেবা থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদেরই। দপ্তরের ভেতরেও কাজকর্ম ব্যাহত। প্রশাসনিক অচলাবস্থার জেরে আরও অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে পুরুলিয়া পুরসভা, এমনটাই মত পুরবাসীর।











Post Comment