বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, সম্রাট নাগ ও সঞ্জয় চৌধুরী, অর্জুনজোড়া(হুড়া) :
কত আশা ছিল দুই বিজ্ঞান মনস্ক সংগঠনকে ভূত দেখিয়ে পকেটে ঢুকবে ৫৫ লাখ টাকা৷ কিন্তু ধোঁকা দিলো তেঁতুলগাছের ভূত। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবং ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি হুড়ার অর্জুনজোড়া গ্রামের তেঁতুল গাছের ভূত একটি আজগুবি ঘটনা বলে প্রমাণ করতে রাত জাগল। আরও অনেকের সঙ্গে দ্বিতীয়বার রাত জাগলো পুরুলিয়া মিররের প্রতিনিধিরাও। কিন্তু কোথায় কী? ভূত থাকলে তো দেখা দেবে! অগত্যা বিজ্ঞান মঞ্চের সৌজন্যে রাত পিকনিকই হয়ে গেল। মেনু রুটি,মাংস, ফ্রায়েড রাইস আর পনির।

কেশরগড় গ্রামের বাসিন্দা শম্ভুনাথ বাউরী বলেন, রোজ দিন নেই রাত নেই গাড়ি নিয়ে অর্জুনজোড়া কেশরগড় করি। কই কোনওদিন তো কিছু দেখলাম না। এ সব গুজব মাত্র।
পুরুলিয়া জেলার ভূত মানেই এতদিন একচ্ছত্র সম্রাট ছিল বেগুনকোদর রেলওয়ে স্টেশন। রাত জেগে সেই ভূতের কাহিনিকে স্রেফ গুজব বলে যেভাবে প্রমাণ করেছিল বিজ্ঞান মঞ্চ, অর্জুনজোড়ার বাইকধরা ভূতকেও সেভাবেই শূন্য রানে বোল্ড করে দিল রবিবাসরীয় রাত্রি জাগরণ।

রটনা ছিলো হুড়া থানার অর্জুনজোড়া থেকে কেশরগড় যাওয়ার পথে তেঁতুল গাছের তলায় অশরীরী বাইক ধরে আটকাচ্ছে। শরীরে দিচ্ছে আঁচড়। রটনার প্রভাব অর্জুনজোড়া সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে পড়েছিল আতঙ্কের কালো ছায়া হয়ে। প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল সেই পথে চলাফেরা। স্কুলে কমে গিয়েছিল পড়ুয়ার সংখ্যা। নেট দুনিয়ায় বিশেষ ভাবে ভাইরাল হয়ে যায় সেই খবর। পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান মঞ্চ এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির তরফ থেকে ভূত দেখাতে পারলে ৫ লক্ষ এবং ৫০ লক্ষ টাকার ইনাম ঘোষণা করা হয়। সংগঠনগুলি রাত জেগে দেখিয়ে দিল ভূত বলে কিছু নেই

পার্শ্ববর্তী জুজুডি গ্রামের বাসিন্দা সুমন ব্যানার্জি বলেন, “আতঙ্ক ছিল। স্কুলে স্কুলে কমে গিয়েছিল পড়ুয়ার সংখ্যা। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই ভূত বলে যে কিছু হয় না, বিজ্ঞান মঞ্চ আর যুক্তিবাদী সমিতি তো দেখিয়েই দিলো।
রবিবার সেই কুখ্যাত তেঁতুল তলায় রাত জাগার কর্মসূচি গ্রহণ করা পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান মঞ্চ এবং পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি। ইচ্ছাকৃত ভাবে ছড়ানো হয়েছে ভূতের গুজব, মনে করছেন তাঁরা।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তথা চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কোথাও কোন অশরীরী, অলৌকিক শক্তির অনুভব করিনি। এই রাস্তায় থাকা তেঁতুল গাছ বা জনশূন্য পিচ রাস্তা ঘিরে যা কিছু রটানো হয়েছিল সবটাই গুজব। আমরা বারবার পুলিশ প্রশাসনকে এই কথাটাই বলছি যদি ভূত-প্রেত কুসংস্কার নিয়ে গুজব ছড়ায় তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ করুন। “
রাত্রি জাগরণের সময় দুটি সংগঠনের সঙ্গে পুলিশ এবং বনদপ্তর সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেন কেউ গুজব ছড়ালে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, ” স্কুল শিক্ষার সিলেবাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হোক কুসংস্কার বিরোধী বিষয়গুলো। নয়তো এরকম রাত জাগতেই হবে মাঝেমধ্যে। “









Post Comment