insta logo
Loading ...
×

চাদর বাঁচালো বাঘের হাত থেকে

চাদর বাঁচালো বাঘের হাত থেকে

নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দোয়ান:

চাদর বাঁচালো বাঘের হাত থেকে। শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য চাদর তো কাজে লাগেই, এবার বাঘ থেকে বাঁচতেও চাদরই লাগল কাজে। উপস্থিত বুদ্ধির বলে গায়ের চাদর মাথার ওপর বনবন ঘুরিয়ে বাঘের মুখোমুখি হয়েও বাঁচলেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের পুকুরকাটা গ্রামের কৃষক যুবক সর্বেশ্বর মান্ডি। রবিবার শীতের সকালে শরীরে চাদর জড়িয়ে মাঠে গিয়েছিলেন তিনি। সামনেই দেখেন আস্ত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। হাতে তো অস্ত্র শস্ত্র কিছুই নেই। নিদেন লাঠিও নেই। অগত্যা আগুপিছু না ভেবে মাথার উপর বনবন করে চাদর ঘুরিয়ে চললেন তিনি। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখল মিঃ শার্দূল। তারপরই চলে গেল বনের দিকে।

বনদফতরকে এমন ঘটনার কথাই বলেছেন সর্বেশ্বর মান্ডি। বন দফতর ছুটে এসেছে এলাকায়। তবে ওই বিস্তীর্ণ এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পায়নি কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। কিন্তু ওই যুবকের কথা
উড়িয়েও দিচ্ছেন না তাঁরা। তবে বাঘটি এখন ঠিক কোথায় টাইগার কনজারভেশন অথরিটির নিয়ম অনুযায়ী তা জানাতে চাইছেন না তাঁরা।

তবে জিনাতের আশিক যে বাঁকুড়া থেকে আবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে ফিরে এসেছে তা স্বীকার করে নিয়েছে বনদফতর। কী করে বান্দোয়ানের জঙ্গলে ফিরল জিনাতের প্রেমিক প্রবর? বন দফতর জানালো বাঁকুড়ার সারেঙ্গার পিররগাড়ি রেঞ্জ থেকে মটগোদা রেঞ্জের জঙ্গল। সেখান থেকে রানিবাঁধ রেঞ্জের বারোমাইল জঙ্গল, সুতান হয়ে ঝিলিমিলি রেঞ্জ ছুঁয়ে বান্দোয়ানে ঢুকে পড়ে সে।

বাঘ দর্শন করা বান্দোয়ানের কুইলাপালের পুকুরকাটা গ্রামের বাসিন্দা সর্বেশ্বর মান্ডি বলেন, ” তখন আমি মাঠে গিয়েছিলাম। পুকুরকাটা জঙ্গলে যখন আমি মুখ ধোওয়ার জন্য দাঁতন ভাঙছিলাম, তখন হঠাৎ চোখে পড়ল বাঘের দিকে। গায়ে হলুদ ডোরাকাটা দাগ। চমকে উঠলাম। ১৫-২০ ফুট দূরে থাকলেও পা তুলে গর্জন করছিল। দেখতে পেয়েছিল আমাকেও। উপায় না দেখে গায়ে থাকা চাদর মাথার উপরে বনবন করে ঘোরাচ্ছিলাম। আর হুলা পার্টির মত চিৎকার জুড়ে দিই। তবুও সে গর্জন করেই যাচ্ছিল। ভয়ে ভেতরটা শুকিয়ে উঠেছিল।” ওই স্নায়ু যুদ্ধে জয়ী হলেন পুরুলিয়ার যুবক। তার চাদর আন্দোলনে কিছুক্ষণ পর বাঘটি পিছনে জঙ্গলের ভেতরে চলে যায়। জীবন নিয়ে দৌড়ে একটি পোল্ট্রি ফার্মে ঢুকে পড়েন সর্বেশ্বর। যুবকের কথা শুনে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের যমুনা বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় হন্যে হয়ে পায়ের ছাপ খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু বাঘের পদচিহ্ন তারা পাননি। ওই এলাকা বান্দোয়ানের যমুনা বনাঞ্চল হলেও তারপাশেই রয়েছে মানবাজার ২ নং বনাঞ্চলের জামতোড়িয়া বিটের গোলামারা জঙ্গল। অল্প দূরে গুড়মা পাহাড়। রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলের মতোই তার প্রকৃতি। সেখানকার জঙ্গলে বন্য শূকর রয়েছে, তেমনই আছে জল পান করার জন্য ঝোরা। জিনাতের আশিক যে ওই পাহাড়-জঙ্গলে চলে যেতে পারে তেমন সম্ভাবনাও কিন্তু আছে। বাঘ যদি সেখানে আছেই, ওই এলাকায় পায়ের ছাপ কেন দেখা গেল না? শুকনো পথেও তো বাঘের পায়ের ছাপ বোঝা যায়! অন্যদিকে পুকুরকাটা গ্রামের ওই জঙ্গলে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করতে আসা বহু মানুষজনই বলছেন, তারাও বাঘের ডাক শুনেছেন!

ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছে বাঁকুড়ায় দু’দিন কাটিয়ে জিনাতের আশিক ফের ফিরেছে বান্দোয়ানে! বন দফতরের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আশিক বাঘের যাতায়াত। কখনও সোজা, কখনও ডাইনে বাঁয়ে,
কখনও একেবারে ইউটার্ন। শনিবার দুপুরের দিকে দক্ষিণ বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকের নেতুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পড়াশোল গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ মেলে। বন কর্মীরা অনুমান করেছিলেন জিনাতের আশিক হয়তো এবার লালগড়ের দিকে যাবে। কিন্তু তা না করে একেবারে উল্টো পথে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান চলে আসে সে।
বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) প্রদীপ বাউরি বলেন, “বাঘটি সম্ভবত শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে সারেঙ্গা থেকে রাইপুর হয়ে রানিবাঁধের বারোমাইল জঙ্গলের পথে চলে যায়। সেখান থেকে সুতান, ঝিলিমিলি হয়ে বান্দোয়ান চলে গিয়েছে বলে অনুমান।”

Post Comment