নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝালদা :
কাশ্মিরে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছেন ঝালদার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনীশ রঞ্জন মিশ্রা। হায়দ্রাবাদে কর্মরত আইবি অফিসার মনীশবাবু তার পরিবারকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ঘটে গেল এই পৈশাচিক ঘটনা। শোকে কাতর পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। বুধবার নিহতের বাড়িতে দেখা করতে যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো।

ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন সুকান্ত বাবু। জানালেন, “কাশ্মিরের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবেই। ধর্মের নামে যতদিন না মানুষ খুন করা বন্ধ হয়, ততদিন বন্ধ হবে না এই মৃত্যু মিছিল। “
কোন রাখঢাক না করে জানিয়ে দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা আইবির ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন মনীশরঞ্জন মিশ্র।

ঝালদার চকবাজারের বাসিন্দা আইসক্রিম ব্যবসায়ী আদিত্য শর্মা বলেন, “মনীশ আমার থেকে অনেকটাই জুনিয়ার। তবে একসঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম সত্য মেলার মাঠে। ওপেনিং করতো ও। করতো বোলিংও। ডিউজ বলেই আমরা ক্রিকেট খেলতাম। তখন ২৫ ওভারের ম্যাচ চলত। ব্লক মাঠ, সত্যভামা হাইস্কুলের মাঠে ম্যাচগুলো জমে উঠত। তখন ক্রিকেটে এত রান উঠতো না। ধরে খেলার চল ছিল। সেই কাজটা খুব ভালোভাবে করতে পারতো মনীশ। আজ চোখের সামনে সব কিছু ভাসছে।”

স্মৃতিচারণ করেছেন বাল্যবন্ধু মনোজ কুমার রুংটা। তিনি বলেন, “দু’দিন অন্তর আমাদের কথা হতই। তবে গত রবিবার-ই যে শেষ কথা হবে তা জানতাম না। আমার স্বপ্ন ছিল আমার বন্ধু একদিন এসপি হবে। সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছিল। কিন্তু থেমে গেল তার জীবনের চাকা।”
নিয়তির খেলা বড়ো ভয়ানক। কাটরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার ট্রেনে চেপেছিলেন মনীশ বাবুর বাবা
মঙ্গলেশ মিশ্র, মা আশা দেবী। সঙ্গে ছিলেন তাদের মেজো ছেলে রাহুলরঞ্জন ও ছোট ছেলে বিনীত।
বৃহস্পতিবার জম্মুর কাটরাতে পৌঁছানোর কথা ছিলো তাঁদের। সেখান থেকে একত্রে তাঁরা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যেতেন। কিন্তু এমন ভয়ানক ঘটনার খবর শুনে মঙ্গলবার ডালটনগঞ্জ থেকে ফিরে আসেন তাঁরা।
অসামরিক বিমান চলাচলের সঙ্গে যুক্ত বিনীত মিশ্র বলেন, “এই ট্যুরটা বহুদিন ধরে আলোচনা করে আমরা বানিয়েছিলাম। বাড়ির সবাই মিলে খুব মজা করতে চেয়েছিলাম। তা আর হলো না। দাদাকে হারাতে হলো।”

মনীশ বাবুর বাবা মঙ্গলেশ মিশ্র ঝালদা হিন্দি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “কাশ্মীরে আমরা যদি সবাই যেতাম, তিন ছেলেকেই যদি মেরে দিত ওরা, কী হতো তাহলে?”
শোক সন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার বার্তা দেন। একইভাবে বিজেপি নেতৃত্বও তাদের পাশে থাকার কথা বলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। জানালেন জেলা বিজেপির সহ সভাপতি গৌতম রায়।
তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও পরিবারের পাশে রয়েছেন। বুধবারই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। দেখা করেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাঁচি এয়ারপোর্ট-এ মৃত আইবি অফিসারের মৃতদেহ আনার কথা বলা হয়।
Post Comment