insta logo
Loading ...
×

উৎসবে মেলা আছে বটে!হারিয়ে গিয়েছে অতীতের আনন্দটাই….

উৎসবে মেলা আছে বটে!হারিয়ে গিয়েছে অতীতের আনন্দটাই….

দেবীলাল মাহাতো
স্টেট এডেড কলেজ টিচার্স,
কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়
ই-মেইল-debilalmahato61@gmail.com
যোগাযোগ:৮৯৭২২৮৯০০৪

পুরুলিয়া বলতে সুন্দরী অযোধ্যা পাহাড়। আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে করম, জাওয়া, ভাদু, টুসু, ঝুমুর,ছৌ-র ছবি। ছোটনাগপুরে বারো মাসে তেরো পার্বণ। বারো মাস কাটে বিভিন্ন লোক উৎসবের মধ্য দিয়ে। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে বসে মেলা। মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসে প্রাণচঞ্চলতা।

মেলা মানেই মহামিলন, সম্প্রীতির মেলবন্ধন। প্রতিটি মেলা গ্রামকেন্দ্রিক। মানুষের
উচ্ছ্বাস ও উদ্দিপনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই মেলায়। সকলের মিলনও ঘটায় এই মেলা। হয় ভাবের আদান প্রদান। মেলা পরিনত হয় সকল ধর্মের পীঠস্থান রূপে। ছোটনাগপুরে কোনো মেলার তারিখ নির্দিষ্ট , আবার কোনো মেলা তিথি নক্ষত্র মেনে পালিত হয়।

মানুষ আছে । আছে মেলাও। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলায় এসেছে বদল। বদলেছে মেলার চরিত্রও। বিশ্বায়নের প্রভাব, সেই সঙ্গে কর্পোরেটের ছোঁওয়া এসে পড়েছে তথাকথিত অজপাড়াগাঁয়ের প্রাচীন মেলাতেও । মেলা থেকে বিদায় নিয়েছে গ্রামীণ কুটির শিল্প। যেমন- বাঁশের বাঁশি, তালপাতার ভেপু, কাগজের ঘুড়ি, কাঠের তৈরি নাগরদোলা, গাড়ি , মাটির পুতুল, পুতুলনাচ। যে খেলনা গুলো একেবারেই ছিল পরিবেশ বান্ধব। পরিবেশকে রাখতো সুরক্ষিত। শিল্প সামগ্রী বিক্রি করে দু’পয়সা লাভের মুখ দেখতে পেতেন কুটির শিল্পীরা। কিন্তু সেই খেলনা গুলো মেলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। মেলাতে দখল নিয়েছে প্লাস্টিক জাতীয় বিভিন্ন খেলনা, লোহার নাগরদোলা। দিন দিন প্লাস্টিক ও যন্ত্র সভ্যতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে মেলার স্থানীয় বৈশিষ্ট্য গুলো। মেলায় বিভিন্ন খেলনা, জিনিস পত্রের বদলে বেড়েছে খাবারের দোকান। ভাবরা ভাজা, চপ, সিঙ্গাড়া খাবারের জায়গায় স্থান নিয়েছে এগরোল, চাউমিন, ধোসা সহ বিভিন্ন চাইনিজ বিদেশি খাবার। সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে মেলার নিজস্ব করম, জাওয়া, ভাদু, টুসু গান। প্রতিটা মেলায় তার নিজস্ব গান ছিল। যে গান গুলো মেলার মধ্যে গাওয়া হতো। মহিলা সহ পুরুষরা দলবেঁধে সেই গান গুলো রাস্তায় গেয়ে মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতেন। মেলার প্রান হল এই গান। লোকনৃত্য-র জায়গায় পরিবেশিত হচ্ছে চটুল অশ্লীল নাচ, তারস্বর যুক্ত শব্দ দানবের অত্যাচার, শব্দবাজি। সবে মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে মেলার মজাটাই।

নাটুয়া, বুলবুলি, পাতা নাচ, ‌আলকাপ, ঝুমুর সহ লোক বিনোদন নিয়ে জমজমাট হয়ে উঠতো মেলা। এখন আর জমাটি ভাব নেই। কুঠির শিল্পীদের মতো হারিয়ে গেছে এই সব বিনোদনও । ঐতিহ্যবাহি কারুশিল্প ও লোক শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। হারিয়ে গেছে লোক বিনোদনের মাধ্যম, লোকনৃত্য, লোকগীত, লোক ক্রীড়া। উৎসব , মেলা আজ রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত ।বিশ্বায়নের যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি। রাজনীতির কল্যাণে, শব্দ দানবের দাপটে , লোকসংস্কৃতির অবক্ষয়ে মেলা তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতায় মেলার আগত লোকজনদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। গ্রামীণ মেলা গুলি সত্যিকার মানুষের সাথে মানুষের মিলনস্থল। কিন্তু তা ক্রমেই বিষিয়ে যাচ্ছে।

( লেখকের মতামত নিজস্ব )

Post Comment