নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দোয়ান :
বাঘের বান্দোয়ানে ফেরার আশঙ্কা আরও বাড়ল। পুরুলিয়ার সীমানা থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বর্তমান অবস্থান। বান্দোয়ানের আসনপানি, থরকাদহ, দুয়ারসিনি থেকে প্রায় ৩ কিমির মধ্যে পাহাড়-জঙ্গল ঘেঁষে ওই বাঘ রয়েছে। মঙ্গলবার সকালের পদচিহ্ন সেই কথাই বলছে। জামশেদপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে জিনাতের আশিক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি ঘাটশিলা বনাঞ্চলেই রয়েছে। যেখান থেকে বান্দোয়ানের দুয়ারসিনির দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ঘাটশিলা বনাঞ্চলের কালাঝোর থেকে পূর্ব দিকে ১১ কিমি গিয়ে বেকো, কুদলং, ডালাপানি হয়ে দুয়ারসিনি-গালুডি রাস্তা পার হয়ে দুমকাকোচা ঢোকে। সেখান থেকে যায় মৃগীটাড়। ওই জায়গাগুলোতে বেশ কয়েকজন বাঘটিকে দেখতে পেয়েছেন।পাশাপাশি শার্দূল সাহেবের পায়ের ছাপ পাওয়া যায় ওইসব এলাকায়। ফলে ওই বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে ট্র্যাপ ক্যামেরা পাতছে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর বনবিভাগ। পুরুলিয়ার ঝাড়খন্ড সীমানাতেও কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়েছে।

যেহেতু পুরুলিয়ার এত কাছে বাঘের অবস্থান ফলে রিস্ক নিতে চাইছে না পুরুলিয়া বন দফতর। দ্রুত সে যে বাংলায় চলে আসতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই নাইট ওয়াচিং চলছে। আধিকারিক স্তরেও চলছে তদারকি। বান্দোয়ান ১ নং, বান্দোয়ান ২ নং, যমুনা ও মানবাজার ২ নং বনাঞ্চলের রেঞ্জ আধিকারিক ও বিট আধিকারিকরা যৌথ বন পরিচালন সমিতির সঙ্গেও বৈঠক করেন। তারাও রাত পাহারা দিচ্ছেন।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, “হঠাৎ করে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ঢুকলে যাতে আমাদের বিভীষিকার মধ্যে না পড়তে হয় তার জন্য আমাদের নজরদারি ও তদারকি জারি রয়েছে।”

নজরদারি চলছে কেবল বান্দোয়ান ব্লকেই নয়। মানবাজার ২ বনাঞ্চলেও নজরদারি রাখা হয়েছে।বান্দোয়ানেই রয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ৫ সদস্যের দলটি। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকারের তত্ত্বাবধানে সোমবার রাতে পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে ওই বাঘকে বাঁচানোর পাশাপাশি যাতে কারও কোন কিছু ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে জিনাতের আশিকের ঠিকানা কোথায় তা জানতে সচেষ্ট অরণ্য ভবন। তার আবাস জানলে বাঘটির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কেও ধারণা মিলবে। আর তা জানতে রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার তরফে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া বাঘটির একাধিক ছবির পাঠানো হলো ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াতে। বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ জঙ্গল বিশেষে আলাদা আলাদা হয়। ফলে সেই ডোরাকাটা দাগ বিশ্লেষণ করে মিলতে পারে জিনাতের আশিকের ঠিকানা। ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই বাঘ তাদের নয়। সেখানকার অধিকাংশ বাঘের পিঠ খুব কালো। দেখলে মনে হবে কেউ যেন বাঘের পিঠে ঢেলে দিয়েছে কালো রঙ। ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, হাজারিবাগ, বেতলা ব্যাঘ্র প্রকল্প সঠিকভাবে কোন কিছু জানাতে পারেনি। ফলে মনে করা হচ্ছে মধ্যপ্রদেশ বস ছত্তিশগড় থেকেও ওই বাঘ আসতে পারে। দীর্ঘ পথ হেঁটে সে ঝাড়খন্ড হয়ে বাংলায় ঢুকেছে কিনা সেই বিষয়ে খোঁজখবর চলছে।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) সিঙ্গরম কুলানডাইভেল বলেন, ” এই বাঘের ডোরাকাটা কোথাকার তা জানতে ছবি সমেত সবকিছু যথাস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

যেহেতু বাঘটির রেডিও কলার নেই সেকারণেই তার ঠিকানা কোথায় তা বুঝতে অসুবিধায় পড়েছেন বন কর্তারা। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যে বাঘটি কোন ব্যাঘ্র প্রকল্পর নয়ই। ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতাধীন নয় এমন কোন জঙ্গল থেকেও এই বাঘটি চলে আসতে পারে। আর সেই পথে কোথাও না কোথাও জিনাতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কারণেই সে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এমনটাই মনে করছেন ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা।
Post Comment