সুজয় দত্ত , পুরুলিয়া :
নির্বাচিত পুরুলিয়া পুরসভাকে ভেঙ্গেই দিল প্রশাসন। ‘পুরুলিয়া মিরর’ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল প্রশাসক কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি নন, হবেন পুরুলিয়ার মহকুমা শাসক। হলও ঠিক তাই। পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক হলেন পুরুলিয়া সদর মহকুমা শাসক উৎপল কুমার ঘোষ।

নগরোন্নয়ন দপ্তর গত ১৯ নভেম্বর পুরুলিয়া পুরসভাকে শোকজ নোটিস পাঠিয়েছিল। অভিযোগের তালিকায় ছিল শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জলের সঙ্কট এবং দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা আবর্জনা না-সরানোর মতো একাধিক বিষয়। কেন পুরসভা ভেঙে দেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি জবাব পাঠান। কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি, বরং ঘনীভূত হয়।
শোকজের মধ্যেই নতুন করে প্রশ্ন ওঠে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে। অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে ‘চেয়ারম্যান–ইন–কাউন্সিল’-এর বৈঠকই ডাকেননি পুরপ্রধান। সেই অভিযোগ-সহ চিঠি পৌঁছায় নগরোন্নয়ন দপ্তরে। চাপে পড়ে তড়িঘড়ি বোর্ডের বৈঠক ডাকতে বাধ্য হন নবেন্দু মাহালি।
ডিসেম্বরের মাদ পয়লা সাড়ে তিন ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক কার্যত রূপ নেয় অনাস্থার মঞ্চে। পরিষেবা ব্যাহত হওয়া, প্রশাসনিক অচলাবস্থা, সব কিছুর দায় একযোগে পুরপ্রধানের উপর চাপান তৃণমূল ও বিরোধী কাউন্সিলররা। কী ভাবে বোর্ড টিকিয়ে রাখা যায়, সে আলোচনা কার্যত হয়ইনি সেদিন। পানীয় জলের সংযোগ না থাকা থেকে শুরু করে আবর্জনা পরিষ্কারে গাফিলতি, সব অভিযোগের কেন্দ্রে ছিলেন পুরপ্রধান নিজেই।
বিরোধীদের পাশাপাশি তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশও অভিযোগ করেন, পুরপ্রধানের ‘একচ্ছত্র’ সিদ্ধান্তে পুরসভার প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৈঠকের রেজোলিউশনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার দায় পুরপ্রধানের। সেই রেজোলিউশনের বিভিন্ন দিকই শোকজের উত্তরে পাঠানো হয়। প্রশাসনিক মহলের মতে, এরপর ‘বোর্ড ভেঙে যাওয়া’ ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা।
মঙ্গলবার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে। পুরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন মহকুমা শাসক উৎপল কুমার ঘোষ। দায়িত্ব নিয়েই নিজের চেম্বারে বৈঠক শুরু করেন তিনি। পুরসভার বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, আপাতত তিনটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল এবং আলোর ব্যবস্থা।

এদিকে বিজেপির তরফে আগেই অভিযোগ তোলা হয়েছিল, নির্বাচিত পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার এক্তিয়ার প্রশাসনের নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে রঘুনাথপুর পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গিয়েছিল বিজেপি। সেই মামলায় আদালতের রায়ে ফেরেন তৃণমূলের পুরপ্রধান। পুরুলিয়ার ক্ষেত্রেও কি একই পথে হাঁটবে বিজেপি? রাজনৈতিক মহলে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।








Post Comment