দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
বিঘার পর বিঘা জমিতে পড়ে রয়েছে টমেটো। গাছে পাকা টমেটো গাছেই নষ্ট হচ্ছে। টমেটোর মরশুমেই গ্রীষ্মের প্রাক্কালে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একই ছবি। এ যেন লকডাউনের দৃশ্য।
দাম না মেলায় আর্থিক ক্ষতির মুখে আড়শা সহ জেলার টমেটো চাষিরা। বেগুন , লাউ, শশা সহ অন্য আনাজের দাম বাড়লেও, টমেটোর দাম না বাড়ায় হতাশ চাষিরা। ভরা গ্রীষ্মেও টমেটোর দাম দেড় থেকে ২টা কেজি । একশো থেকে দেড়শো টাকা কুইন্টাল টমেটো। তাও খদ্দের মিলছে না। আক্ষেপের সুরে আড়শার বামুনডিহার এক চাষি
উল মাহাতো বলেন, “শ্রমিক দিয়ে যে টমেটো তুলবো কিন্তু তার মজুরিও উঠছে না।” আমন ধান বাড়িতে তোলার আগে মাঘ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত টমেটোর চাষ হয় পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। জেলার মানুষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি হয় ঝাড়খন্ডের বোকারো, রাঁচি, ধানবাদ, রামগড় কিংবা জামশেদপুরের মতো বড় শহরগুলোতে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এই বছর ফলনও হয়েছে ভালো। তাই মুখে হাসি ফুটেছিল টমেটো চাষিদের। বিক্রির সময় যখন এলো তখন দাম শুনে মাথায় হাত চাষিদের। দাম ঠেকেছে ২-৩ টাকা কেজি দরে । কোথাও কোথাও ১টাকা। এর ফলে চাষের খরচ উঠছেই না। লাভ তো দুরের কথা। জেলার সব জায়গার চিত্র মোটের উপর এক।

আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রামের সবজি চাষী সুমন সিং সর্দার জানান, “চার বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছিলাম। খরচটুকুও উঠলো না। পাইকাররা ২-৩ টাকার থেকে বেশি দর দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে টমেটো গাছে জলসেচন করতে ছেড়ে দিয়েছি। এখনও কয়েক কুইন্টাল টমেটো পড়ে রয়েছে জমিতে। দিতে চাইলেও কেউ নিতে চাইছে না। একই বক্তব্য আহাড়রা গ্রামের আনাজ চাষি বুলেট মাহাতোর। তিনি জানান, “প্রথম দিকে দর পাইনি। ভেবেছিলাম গাছ গুলো জলসেচন করে বাঁচিয়ে রাখবো। শেষ মুহূর্তে দাম হয়তো মিলবে। কিন্তু কোথায় কি? । টমেটো বেচে যা দাম পাচ্ছি। তাতে টমেটো তোলার খরচ টুকুও উঠছে না।” ফলে কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই পুরুলিয়ার টমেটো চাষীদের।
কেন এমন অবস্থা? কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “ফলন অতিরিক্ত হওয়ার কারণে দাম একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে। একারনেই আমারা চাষিদের বিভিন্ন প্রকার আনাজ চাষ করার পরামর্শ দিই। একটি আনাজের দাম না পেলেও, অন্য আনাজ বিক্রি করে তা যেন পুষিয়ে যায়।”
Post Comment