insta logo
Loading ...
×

ঐতিহ্যবাহী খেলাই চণ্ডী মেলা বন্ধ! গভীর উদ্বেগে আয়োজকরা

ঐতিহ্যবাহী খেলাই চণ্ডী মেলা বন্ধ! গভীর উদ্বেগে আয়োজকরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, রঘুনাথপুর :

তিন শতাধিক বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খেলাই চণ্ডী মেলা ২০২৬-এর সমস্ত প্রস্তুতি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল মেলা আয়োজক কমিটি। প্রশাসনিক সহযোগিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং নতুন শর্ত আরোপের প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।
কমিটির দাবি, ২০২৬-এর মেলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয়ে রঘুনাথপুর থানার আধিকারিকের সঙ্গে আয়োজক কমিটির বৈঠকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, মেলা অনুষ্ঠিত করতে হলে সমস্ত প্রশাসনিক ব্যয় কমিটিকেই বহন করতে হবে, অথবা কমিটিকে লিখিতভাবে ঘোষণা করতে হবে যে আইন-শৃঙ্খলা সহ মেলার সমস্ত দায়িত্ব স্বেচ্ছাসেবকরাই পালন করবেন এবং যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্পূর্ণ দায় কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবকদেরই নিতে হবে। এই দুই শর্তকেই আয়োজক কমিটি ঐতিহ্যবিরোধী ও বাস্তবসম্মত নয় বলে দাবি করেছে।
আয়োজকদের বক্তব্য অনুযায়ী, খেলাই চণ্ডী মেলা তিন শতাধিক বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেবের শাসনকাল থেকে শুরু করে নবাবি আমল, ব্রিটিশ শাসন, স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট সরকার এবং বর্তমান সরকারের আমলেও কখনও এমন শর্ত বা ব্যয়ের বোঝা কমিটির উপর চাপানো হয়নি। বিভিন্ন সরকারি নথি ও আদালতের রায়েও এই মেলার প্রাচীন ঐতিহ্যের উল্লেখ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলা পঞ্জিকায় মাঘ মাসের ১ তারিখ থেকে টানা সাতদিন ধরে মা চণ্ডীর পূজা ও অর্চনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই মেলায় প্রতিবছর পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান সহ ঝাড়খণ্ড থেকেও হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে এই মেলা।
আয়োজক কমিটির অভিযোগ, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মেলা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলেছিল। ২০২৪ সালে পরিস্থিতি চরম আকার নেয় মেলা কমিটির সদস্যদের উপর হামলা,
কীর্তন ও ভোগঘরে অগ্নিসংযোগ, একাধিক সদস্যকে মারধর ও গুরুতর আহত করা, পুরোহিতকে অপমান ও তাড়িয়ে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলেছিল।

কমিটির স্পষ্ট বক্তব্য, প্রশাসনের পূর্ণ ও নিঃশর্ত সহযোগিতা ছাড়া, অথবা সমস্ত খরচ ও দায়িত্ব একতরফাভাবেঙ চাপিয়ে দিয়ে, এই বিশাল ও জনসমাগমপূর্ণ ধর্মীয় মেলা আয়োজন করা অসম্ভব। আয়োজকদের মতে, যেখানে প্রশাসনের দায়িত্ব এমন ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে রক্ষা করা, সেখানে উল্টো চাপ সৃষ্টি করে মেলা বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।
২০২৫ সালে প্রশাসনিক সহায়তার কারণে মেলা সম্ভব হলেও, ২০২৬ সালের জন্য সেই সহযোগিতার কোনো লিখিত বা মৌখিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে খেলাই চণ্ডী মেলা ২০২৬-এর সমস্ত প্রস্তুতি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আয়োজক কমিটি আশা প্রকাশ করেছে, প্রশাসন এই প্রাচীন ঐতিহ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে সহযোগিতার হাত বাড়াবে এবং এই মেলা আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে।

Post Comment