নিজস্ব প্রতিনিধি,পুরুলিয়া:
দারিদ্র্য, প্রতিকূলতা ও সামাজিক প্রান্তিকতার দেওয়াল ভেঙে বাংলা গবেষণার আকাশে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পুরুলিয়ার বরাবাজার ব্লকের এক প্রত্যন্ত গ্রামের যুবক বিকাশ কালিন্দী। সিধো–কানহো–বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ব্যতিক্রমী ও সাহসী গবেষণার মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন তিনি।
বিকাশ কালিন্দীর গবেষণার বিষয়— ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথাসাহিত্যে মুসলিম মানস’— বাংলা সাহিত্যে এক অভিনব ও সংবেদনশীল সংযোজন বলেই মনে করছেন বিদ্বৎমহল। বাংলা কথাসাহিত্যের তিন মহারথীর রচনায় মুসলিম সমাজ ও মানসিকতার উপস্থাপনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করে গবেষক বহু অনালোকিত তথ্য ও ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছেন।
দিন দিন সিধো–কানহো–বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ যে নতুন নতুন গবেষণায় জাতীয় স্তরে সুনাম অর্জন করছে, বিকাশ কালিন্দীর এই অভিসন্ধর্ভ সেই ধারাকে আরও সমৃদ্ধ করল বলেই মত শিক্ষাবিদদের। অনুপম তথ্যসংগ্রহ, গভীর বিশ্লেষণ ও অভিনব দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তার গবেষণাকর্ম বাংলা গবেষণার ভাণ্ডারকে নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে।
গবেষণার সাফল্যের নেপথ্যে তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকার কথাও বিশেষভাবে উঠে এসেছে। বিকাশ কালিন্দীর গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক, বাংলা বিভাগের প্রফেসর স্বপন কুমার মণ্ডল চূড়ান্ত পরীক্ষার পর বলেন—
“বিকাশ যেভাবে তার গবেষণাকে উৎকর্ষের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে, তাতে আমি গর্বিত। বাংলা সাহিত্যের তিন মহারথীর কথাসাহিত্যে মুসলিম মানসের মতো সংবেদনশীল অথচ অভিনব বিষয় নিয়ে যে গভীর অনুসন্ধান সে করেছে, তা বাংলা গবেষণার অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। এই গবেষণা ভবিষ্যতে বাংলা গবেষণার ধারায় নবদিগন্তের দিশারি হবে।”
চূড়ান্ত পরীক্ষার বহির্পরীক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর সুজিতকুমার পাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং–১-এর ৩০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রছাত্রী, গবেষক ও অধ্যাপকদের উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয় এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
অন্যদিকে, পুরুলিয়ার রুক্ষ ও শুষ্ক মাটির সন্তান বিকাশ কালিন্দীর ব্যক্তিগত জীবনকাহিনিও কম অনুপ্রেরণামূলক নয়। দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে একসময় তিনি ভেবেছিলেন, পড়াশোনার পথ হয়তো স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েই থেমে যাবে। সমাজের একেবারে প্রান্তিক অবস্থান থেকে ‘ডক্টরেট’ অর্জনের স্বপ্ন তখন তাঁর কাছে ছিল দূর আকাশের তারা। কিন্তু একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও অদম্য মানসিকতাই তাঁকে পৌঁছে দিল সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে।
সিধো–কানহো–বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়েই এমএ পড়ুয়া হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশ কালিন্দীর এই সাফল্য আজ দেশের অসংখ্য প্রান্তিক ও হতদরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের কাছে নতুন আশা ও প্রেরণার বার্তা বহন করছে— যে অসাধ্য বলে কিছুই নেই।










Post Comment