সুজয় দত্ত, বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :
জিনাত কি গাইছে জিনাত আমানের মতো, ” বাহার বনকে আউঁ কভি তুমহারি দুনিয়াঁ মে/ গুজর না যায়েঁ ইয়ে দিন কহিঁ ইসি তমন্না মে”?
দিন পার। রাত নেমেছে বান্দোয়ানের বনে। বাঘিনী জিনাত এখনও অধরা। রাতের আঁধারে আর কোন অভিযান হবে না। অপেক্ষা সূর্যোদয়ের। জিনাতের ডিনারের জন্য মেনু রেডি করে রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে বিভিন্ন পয়েন্টে সাজিয়ে রেখেছে বন দফতর। মেনুতে আছে শূকর, আছে মহিষ, আছে ছাগল। মেনু নয় এগুলো স্রেফ টোপ। জিনাত ডিনার করতে এলেই ধরা পড়বে বন দফতরের পাতা ফাঁদে। আর ফাঁদে পড়লে? নিয়ে আসা হয়েছে বিশেষ খাঁচাও। সেই খাঁচায় করে নিজের ঘর ওড়িশায় ফেরত পাঠানো হবে জিনাতকে। তার আগে ছোঁড়া হতে পারে ঘুম পাড়ানি গুলি। ওড়িশার সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ থেকে ট্রাঙ্কুলাইজার অভিজ্ঞ বিশেষ দল এসে গেছে। তাঁদের সঙ্গে রয়েছে বিশেষ স্যাটেলাইট যন্ত্র ।
ওড়িশার সীমানা পার করে ঝাড়গ্রাম লাগোয়া বেলপাহাড়ি জঙ্গল হয়ে আড়াই বছরের বাঘিনীটি পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড়ে। দেড়মাস হয়ে গেল ‘ঘর ছাড়া’ জিনাত। তার নাগাল পেতে হিমসিম খাচ্ছে ওড়িশা আর বাংলার বন দফতর।
মহারাষ্ট্রের তাডোবা জঙ্গল থেকে যমুনা ও জিনাত নামে দুটি বাঘিনীকে ওড়িশার সিমলাপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে আনা হয়েছিল। রাখা হয়েছিল কোয়ারেন্টাইনে। চলছিল তাদের সফট রিলিজ করার পালা। ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্দরে তাদের গতিবিধি ছিল নিয়ন্ত্রিত। হঠাৎই রাজ্যের সীমানা টপকে ফেলে তারা। প্রথমে জিনাত ও পরে ওড়িশা ছাড়ে যমুনা।দুজনের গলাতেই রয়েছে রেডিও কলার বাঁধা। অ্যান্টেনা আছে ওড়িশার বনদফতরের কর্মীদের হাতে। খবর রটেছিল ওড়িশা থেকে বাংলায় ঢুকেছে জোড়া বাঘ-যমুনা ও জিনাত। স্বস্তির ঘোষণা রাজ্যের বনদপ্তরের। রেডিও কলারের তথ্য বলছে, আপাতত যমুনা নামক বাঘিনীর অবস্থান ওড়িশার বালাসোরের জঙ্গলে। কিন্তু জিনাত এখন পুরুলিয়ায়। রবিবার সকাল দশটা নাগাদ শেষবার বাঘিনীর লোকেশন ট্র্যাক করা গিয়েছে। ওড়িশার সীমানা পার করে ঝাড়গ্রাম লাগোয়া বেলপাহাড়ি জঙ্গল হয়ে আড়াই বছরের বাঘিনীটি পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড়ে। শ্যাডো জোন বলে কলার কাজ করছে না এখানে।
সকাল থেকে তল্লাশি চালাচ্ছে বনদফতরের কর্মীরা। পাশাপাশি ওই বাঘিনীকে খুঁজতে হাজির হয়েছে ওড়িশার সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ থেকে ট্রাঙ্কুলাইজার অভিজ্ঞ বিশেষ দল। সঙ্গে রয়েছে বিশেষ স্যাটেলাইট যন্ত্র। এছাড়া ওই দলে রয়েছেন পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ, পুরুলিয়া কংসাবতী সাউথ ডিভিশনের ডিএফও পূরবী মাহাতো।
কংসাবতি দক্ষিণ বন বিভাগের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন,”বান্দোয়ানের বনেই রয়েছে বাঘিনী জিনাত। মাইকিং করে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন জঙ্গলে না যান তাঁরা। যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, বন দফতর সেই সব ব্যবস্থা নিয়েছে। ” রাতের অন্ধকারে কোন অভিযান হবে না। জানিয়ে দিলেন ডিএফও। রাতে একাকিনী বাঘিনীকে বিরক্ত করতে চাইছে না বন দফতর। অবশ্য বাঘিনী ধরতে ঠিক কী কী পরিকল্পনা রয়েছে তা ভাঙতে চাননি ডিএফও। সুন্দরবন থেকেও এসে গেছে বন দফতরের টিম। তবে ঠিক কোন পদ্ধতিতে বাঘিনীকে কাবু করতে চাইছে বন দফতর, সে বিষয়টি গোপনীয়তার স্বার্থে খোলসা করতে চাননি ডিএফও।
বন দফতর হয়তো জিনাতের উদ্দেশ্যে গাইছে, ” চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো/ নজর নেহি চুরানা সনম”।
কারণ? ‘নজর হঠি/ তো দুর্ঘটনা ঘটি!’
Post Comment