নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
জিনাতের আশিক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের হিসেবই ছিল না সরকারের কাছে। এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আদি বাসস্থান কোথায় তার কোন রেকর্ড নেই শেষবার অর্থাৎ ২০২১-র ব্যাঘ্র সুমারিতে। কিন্তু
ঠিক এক মাসের মাথায় তার প্রাথমিক পরিচয় ও আবাসস্থল জানা গেল প্রযুক্তির সহায়তায়। কোন পথ দিয়ে এসেছে সে জানা গেলো তাও।
সৌজন্যে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়তলি ও ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির আমঝরনায়
ট্র্যাপ ক্যামেরা। ওই ট্র্যাপ ক্যামেরায় বন্দি হওয়া বাঘের ছবির ডোরাকাটা দাগের নমুনা ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াতে পাঠানো হয়েছিল। দেখা যায় সেখানের কোন রেকর্ড মিলছে না। এবার বিভিন্ন ব্যাঘ্র প্রকল্পর ট্র্যাপ ক্যামেরা ধরে ধরে দেখা শুরু হয়। ছবি মেলে ঝাড়খণ্ডের পালামৌতে। আর তখনই বোঝা যায় কোন পথে এসেছে সে।

দেশ জুড়ে বাঘের যে খতিয়ান রয়েছে তাতে এই বাঘটিকে নিয়ে শুরু হলো নতুন তথ্যপঞ্জি তৈরির কাজ। কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না এই বাঘের বর্তমান আই ডি, তার নম্বর কী হবে তা।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় বলেন, “২০২১-র বাঘ সুমারিতে এই বাঘটির কোন রেকর্ড নেই। তবে ঝাড়খন্ডের পালামৌতে কয়েকবার তার ছবি মিলেছে।”

খাঁটি খাঁটি এক মাস ধরে রেডিও কলারবিহীন এই বাঘ বাংলা-ঝাড়খন্ড বনবিভাগকে ল্যাজেগোবরে করে চলেছে। তার চরকিপাক কখনও ঝাড়খন্ড, কখনও বাংলা। বান্দোয়ানে ৪৮ ঘন্টার সাঁড়াশি অভিযান করেও হয়নি বাঘবন্দি।
ঠিক একমাস পর বাঘটির আদি নিবাস জানা গেলেও সে বুঝিয়ে দিয়েছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়তলির বনাঞ্চল তার পছন্দের! বৃহস্পতিবার তার অবস্থান ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ে হলেও গত ৩০ দিনে বার বার সে ঘুরেছে এই এলাকা। এখানেই ডেরা বেঁধেছিল সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে আসা জিনাত। তার ফেলে আসা পথেই এখনও হাঁটছে জিনাতের আশিক । আর এর মধ্যেই তাকে রাজ্যের বনবিভাগ ‘বাংলার গর্ব’ বলে অভিহিত করে তাকে বন্দি করার অভিযান বন্ধ করেছে। সে হিংস্র নয়। নিজের মতো থাকুক জঙ্গলে। এই বাংলার বনবিভাগের সিদ্ধান্ত।

আশিক নামা
◾৩১ শে ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা- খরসোঁওয়া বনবিভাগের চান্ডিল বনাঞ্চলের বালিডিতে একটি গবাদি পশু ও বাছুর মেরে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল।
◾চান্ডিল বনাঞ্চল থেকে খুঁটি বনাঞ্চলের তামাড় এলাকাও ঘুরে আসে সে।
◾এরপর আশ্রয় দলমা পাহাড়ে। মাঝেমধ্যে লোকালয়ে তাকে দেখতে পাওয়ার দাবি উঠেছেম
◾১২ই জানুয়ারি দলমা থেকে প্রবেশ করে বাংলায়।
◾১৭ জানুয়ারি শুক্রবার বান্দোয়ানের জানিঝোড় গ্রামের বাসিন্দা যুধিষ্ঠির মাহাতো সন্ধ্যায় বান্দোয়ানের তালপাত থেকে নিজের বাড়ি জানিঝোড় যাওয়ার পথে নেকড়া গ্রামের কাছে বাঘের দেখা পেয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন একেবারে মুখোমুখি হয়েও বাঘ স্রেফ মুখ ঘুরিয়ে চলে গিয়েছিল
◾১৮ জানুয়ারি শনিবার বান্দোয়ানের ভাঁড়ারির জঙ্গলে ভোর ৩ টে ২৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে প্রথমবার ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার ছবি।
◾২০ জানুয়ারি। ৪৮ ঘন্টার লাগাতার বাঘবন্দি অভিযানে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে ফের ঝাড়খন্ডে চলে যায় সে।
◾ ২৩ জানুয়ারি ফের বাংলায়। বেলপাহাড়িতে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ছবি তুলিয়ে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় চলে যায় সে।
◾২৬ জানুয়ারি আবার বান্দোয়ানে চলে আসে বাঘটি। উপস্থিত বুদ্ধির বলে গায়ের চাদর মাথার ওপর বনবন ঘুরিয়ে বাঘের মুখোমুখি হয়েও বাঁচলেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের পুকুরকাটা গ্রামের কৃষক যুবক সর্বেশ্বর মান্ডি।
বান্দোয়ান থেকে আবার দক্ষিণ বাঁকুড়া যায় বাঘটি। সেখান থেকে ফের পুরুলিয়ার যমুনাগোড়া।
◾২৮ জানুয়ারি আবার দলমায় বাঘ।
সে কি নতুন বাসা বাঁধল পুরুলিয়া সীমান্তে, নাকি ফিরে যাবে নিজের বাড়ি পালামৌ? প্রশ্নটা বাঘ বিশারদদের ভাবাচ্ছে।
Post Comment