নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া:
শহর পুরুলিয়ার ব্যস্ত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিল এক পরিশ্রমী নারীর প্রাণ। গত রবিবার গভীর রাতে পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের ঠিক পেছনে জেলা প্রশাসনের ওয়্যারহাউসের বিপরীতে
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানোর পাশাপাশি চিকিৎসাধীন অবস্থায়
প্রাণ হারালেন নডিহার এলাকার বাসিন্দা ৫৫ বছরের জল ব্যবসায়ী ঝুমা গোপ। তিনি গত রবিবার রাত থেকে
দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রবিবার মধ্যরাতে আচমকা আগুন লাগে পুরুলিয়ার বাসস্ট্যান্ডের পেছনের অংশে।
মুহূর্তের মধ্যেই আগুন গ্রাস করে নেয় একের পর এক দোকানকে। ওই অগ্নিকাণ্ডে মোট ১১টি অস্থায়ী দোকান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নিজের ছোট্ট জল বিক্রির দোকানেই আটকে পড়েন ঝুমা গোপ এবং গুরুতরভাবে অগ্নিদগ্ধ হন।
পাশেই পুড়ে যাওয়া একটি হোটেলের রাঁধুনি হাঁড়িরাম মাহাতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করেন। এরপর তাকে দ্রুত দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল-এ ভর্তি করা হয়। শরীরের বিস্তীর্ণ অংশ দগ্ধ হওয়ায় অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও শরীরের একাধিক অংশ মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়ায় চারদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঝুমা গোপ। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। এই ঘটনায় জখম হয়েছিলেন হোটেল কর্মচারী শেখ ছুটু। বর্তমানে তিনি বিপন্মুক্ত এবং চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান।
এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়ে সেদিন রাতেই পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান পুরুলিয়া পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস। পরে সোমবার সকালে তিনি হাসপাতালে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ মহিলার খোঁজ নেন। ঝুমা গোপের মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করে তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার পরদিন আমি হাসপাতালে গিয়ে ওকে দেখে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো বাঁচানো যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হলো না। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।” এদিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি তুলেছে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) পুরুলিয়া দক্ষিণ জেলা কমিটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, বৈধভাবে স্টল নির্মাণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তা বণ্টনের দাবিও তোলা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে দমকল ও পুলিশ। তবে কী কারণে আগুন লাগে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর মধ্যেই আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানগুলির জায়গায় নতুন করে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় উঠেছে নতুন বিতর্ক। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন—এই নির্মাণ কতটা বৈধ, আর ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে আদৌ কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না।
একটি প্রাণহানি, বহু মানুষের জীবিকা ধ্বংস—পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের এই অগ্নিকাণ্ড এখন শুধু দুর্ঘটনা নয়। সেই সঙ্গে শিক্ষা দিয়ে গেলো সুরক্ষার ঢিলেঢালাতে কিভাবে কেড়ে নিতে পারে তরতাজা জীবন।










Post Comment