অমরেশ দত্ত, মানবাজার :
তাক লাগিয়ে দিলেন প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ। এমন কমলালেবু ফলালেন যে ফলন দেখতে হাজির উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিকরা। কোথাও কমলা- সবুজ, কোথাও হলদে, কোথাও বা একেবার আদি অকৃত্রিম কমলা রঙ। কমলালেবুর বাহারে ঝলমল করছে গাছ। কেউ বলবে এ কী দার্জিলিং? কেউ বলবে কমলালেবুর শহর নাগপুর! না সে সব কিছু নয়। রুখামাটির পুরুলিয়াতে অসাধ্যসাধন করে দেখালেন প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ।
পুরুলিয়ার মানবাজারের ইন্দকুড়ির চড়কির বাসিন্দা অর্চনা রায়। তাঁর বাড়িতে এখন গাছ ভরা কমলালেবু।
আকারে ও স্বাদে অথেন্টিক কমলালেবু। সেই অম্লমধুর কমলা চেখে দেখতে জম্পেশ ভিড় তাদের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন মানবাজার ১ ও পুঞ্চা ব্লকের উদ্যান পালন দপ্তরের ফিল্ড কনসালটেন্ট
অসীম মিশ্র। তিনি বলেন, “এটা ঠিক কোন জাতের কমলালেবু সে বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। লেবু কিন্তু পুরো মিষ্টি নয়। টকের সঙ্গে মিষ্টির মিশেল। সাধারণত যে আবহাওয়ায় কমলালেবুর ফলন হয় তার সঙ্গে পুরুলিয়ার আবহাওয়ার কোন মিল নেই। এখানকার মাটিও সেরকম নয়। তবুও ফলন হয়েছে, এটা চমকপ্রদ।”
কমলালেবুর ফলনের উপযোগী তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির ওপরে এবং ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।
বেলে ও দোআঁশ মাটিতে কমলালেবু ভালো ফলে। প্রচুর বৃষ্টি দরকার, কিন্তু জল দাঁড়ানো যাবে না এমন ঢালু জমির প্রয়োজন। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় কিছুই মেলে না।তাও এখানে কমলা লেবু ফলিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ।
গৃহকর্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি অর্চনা রায়ের একটি পৃথক পরিচয় আছে। তিনি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। সপ্তাহে তিন দিন মানবাজার শহরের একটি মেডিকেলে তিনি চেম্বার করেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে রোগীও সামলান। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ, ঘর সংসার — সবকিছু সামলে তাঁর এই কমলালেবু উৎপাদন। আজ নয়, প্রায় ১৫ বছর ধরে কমলালেবু ফলছে।তেমন কোন প্রচার ছিলো না। এবার বেশ সাড়া পড়েছে এলাকাজুড়ে।
অসাধ্যসাধন যিনি করেছেন সেই অর্চনা রায় বলেন , “গাছ লাগিয়েছিলেন আমার বাবা। আমি বড় করে তুলেছি। ১৫ বছর ধরে ফল দিচ্ছে গাছটি। আগে ফলপ্রতি ১ টাকা পাওয়া যেত। এবার মিলছে ৩ টাকা করে । বেশ কিছু ফল বিক্রি হয়েছে। বাকি প্রায় ২০০টি।”
অনেক পরিশ্রম করে গাছটি বাঁচিয়ে রেখেছেন। সেই কষ্টের অম্লমধুর ফল পেয়ে তিনিও খুশি।
Post Comment