নিজস্ব প্রতিনিধি, আদ্রা:
উৎসবমুখর পরিবেশে সামাজিক ঐক্য ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার বার্তা নিয়ে শেষ হল আদ্রার
মনিপুর লেপ্রোসি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। খেলাধূলার মধ্য দিয়ে সমাজের মূলস্রোতে পিছিয়ে পড়া মানুষদের যুক্ত করার যে নিরন্তর প্রচেষ্টা এমএলআরসি চালিয়ে আসছে, এদিন তারই বাস্তব রূপ দেখা গেল মনিপুর গ্রামে।
আদ্রা রেল স্টেশন থেকে মনিপুর ফুটবল ময়দান পর্যন্ত মশাল দৌড়ের মাধ্যমে ওই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এই গৌরবময় দৌড়ের সূচনা করেন আদ্রার গর্ব, জাতীয় স্তরের ক্রীড়াবিদ ‘বক্সার চিরু’ নামে পরিচিত চিরঞ্জিত বাউরি। তার উপস্থিতি ও বক্তব্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের মধ্যেও নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করে। নিজের জীবনের সংগ্রাম ও লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে তিনি শিশুদের স্বপ্ন দেখতে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার আহ্বান জানান।এমএলআরসি দীর্ঘদিন ধরে কুষ্ঠাক্রান্ত মানুষ, তাদের সন্তান, অবহেলিত শিশু ও দুঃস্থ মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুধু খেলাধুলার আসর নয়। বরং সমাজের সঙ্গে ‘হোম’-এ থাকা মানুষদের মেলবন্ধনের এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আয়োজকদের কথায়, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলাও মানুষের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য সমান জরুরি—এই বার্তাই তারা সমাজকে দিতে চেয়েছেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় মোট ২৫০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রায় ১৫০ জন এমএলআরসি হোমের বাসিন্দা ও ১০০ জন মনিপুর গ্রামের শিশু-কিশোর। ৭৫, ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়, লং জাম্প, বস্তা দৌড়, গুলি-চামচ দৌড়, কলসি দৌড়সহ নানা ইভেন্টে মাঠ ভরে ওঠে হাসি, উচ্ছ্বাস আর প্রতিযোগিতার আনন্দে। দ্বিতীয় ও শেষ দিনে গ্রামাঞ্চলের বয়স্ক মানুষদের অংশগ্রহণেও প্রতিযোগিতা আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং এমএলআরসি আদ্রা-এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যরা। সকল অতিথিকে উত্তরীয় পরিয়ে আন্তরিকভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। খেলার পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছিল ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন—ভাত, ডাল, পাঁচ রকমের সবজি, চাটনি, পাপড়, সকালে আলু সেদ্ধ ও মাড়ভাত। এছাড়া ফল ও মিষ্টি। এমএলআরসি-র কর্ণধার নবকুমার দাস জানান, “এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুধু খেলাধূলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি শিশুদের মনে আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা, সহনশীলতা ও জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার এক শক্তিশালী মাধ্যম। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষরাও যে সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সেই বার্তাই আমরা দিতে চাই।” সমগ্র আয়োজনকে সফল করে তুলতে এমএলআরসি-র সকল কর্মী সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম নজর কেড়েছে। তাদের দলগত উদ্যোগেই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিনগুলি স্মরণীয় হয়ে যায়। যেখানে খেলাধূলার আনন্দের সঙ্গে মিশে গিয়েছে সামাজিক অন্তর্ভুক্তির দৃঢ় প্রত্যয়।











Post Comment