সুইটি চন্দ্র,পুরুলিয়া :
ছট উৎসব আর কেবল হিন্দিভাষী মানুষদের সীমাবদ্ধ আচার নয় — এখন এটি পরিণত হয়েছে এক সর্বজনীন মিলন উৎসবে। সূর্য দেবতার আরাধনায় ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতির পার্থক্য ভুলে একসাথে নেমে পড়েছে পুরুলিয়া জেলা। শহর থেকে গ্রাম, বাঁধ থেকে নদীর ঘাট—সবখানেই এখন এক অন্য রঙ, এক অন্য আবহ।
পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া, পারবেলিয়া, রঘুনাথপুর এলাকা যেন বিহারের ছায়া। দামোদর নদীর ঘাটে ভোর থেকে রাত অবধি হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় সূর্য আরাধনায়। আবার শহরের প্রস্তাবিত জাতীয় সরোবর সাহেব বাঁধেও সান্ধ্যকালীন অর্ঘ্য দিতে মানুষের ঢল নামে। ছটের এই ভক্তিময় আবহে কাঁসাই নদীর তীরেও আলো ঝলমল।

জেলার প্রশাসন ও পুরসভা একযোগে উদ্যোগ নিয়েছে উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে। ঘাট পরিষ্কার, আলো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সব ক্ষেত্রেই কড়া নজর রয়েছে কর্তৃপক্ষের। নিতুড়িয়ায় রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চলছে সার্বিক তদারকি, আর শহরে পুরুলিয়া পুরসভা সর্বজনীন উৎসবের আবহ তৈরি করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
চার দিনের এই উৎসবের সূচনা হয় ‘লাউ-ভাত’-এর মধ্য দিয়ে। শনিবার ব্রতীরা শুদ্ধভাবে লাউ-ভাত রান্না করে গ্রহণ করেন। রবিবার ‘খরনা’, এদিন রাতের বেলায় কাঠের আগুনে তৈরি হয় ছটের বিশেষ ভোগ — পায়েস। সেই ভোগ খেয়েই শুরু হয় উপবাস। সোমবার সান্ধ্যকালীন অর্ঘ্যের দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এদিনই সূর্য দেবতাকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয় ‘ঠেকুয়া’ দিয়ে। আর মঙ্গলবার প্রভাতকালীন অর্ঘ্যের মধ্য দিয়েই শেষ হয় এই ভক্তিমূলক উৎসব, ভাঙে উপবাস।
ছট এখন শুধু ধর্মীয় আচার নয় — এটি এক সামাজিক সংহতির প্রতীক। পুরুলিয়ার প্রতিটি কোণে আজ সেই একতার প্রতিধ্বনি শোনা যায় — সূর্যের প্রভায় আলোকিত এক সর্বজনীন উৎসবের আনন্দে।








Post Comment