বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, বাঘমুণ্ডি :
কোনরকম বিচ্ছিন্নতায় ইন্ধন জোগালে আর উন্নয়নে বাধা দিলে জিরো টলারেন্সের হুঁশিয়ারি ফের দিলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার৷ আস্থা শিবিরের খাটিয়া বৈঠকে যোগ দিতে এসে বহিরাগতদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ” পুলিশ কেন উন্নয়ন করতে আসছে এ প্রশ্ন নিয়ে যারা অশান্তি পাকাতে চাইছে, আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব।”
কিন্তু পুলিশের কাজ তো অপরাধ দমন আর শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা। তাহলে সত্যিই তো, কেন উন্নয়নে এগিয়ে আসছে পুলিশ? পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডিতে ছাতাটাড়
ময়দানে আস্থা শিবিরের খাটিয়া বৈঠকে যোগ দিতে এসে অকপটে বললেন, ” শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নেই উন্নয়নের কাজে সাহায্য করছে পুলিশ। একটা সময় তো এমন ছিল যখন পাহাড়ে অনুন্নয়নের ছায়ার আড়ালে সৃষ্টি হয়েছিল অস্থিরতা। আজ পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে রাস্তা হয়েছে। পানীয় জলের বন্দোবস্ত হয়েছে। আমরা সে সব করে দিচ্ছি না। শুধু প্রশাসনের যে বিভাগের কাজ, তাদের সঙ্গে এলাকার যোগসূত্র হচ্ছি। এটুকু না করলে যদি ফের অশান্তি হয়, তখন তো পুলিশকেই সামলাতে হবে।”
ফলে একদিকে অযোধ্যা পাহাড় ঘিরে যখম বহিরাগতদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে, তখন ধারাবাহিক ভাবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ‘আস্থা’ প্রকল্পের খাটিয়া বৈঠকে ভিড় উপচে পড়ছে। এদিন বাঘমুণ্ডির ছাতাটাঁড়েও তার ব্যতিক্রম হলো না। এই খাটিয়া বৈঠকে বাড়েরিয়া, পাথরডি, গোঁসাইডি সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেন অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটির সদস্যরাও।
কখনও রাস্তার জন্য তদ্বির, কখনও চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন। এবার আধার কার্ড শিবির গড়ে অনেকের জীবনের আঁধার ঘোচাবে জেলা পুলিশ।
বছর আড়াইয়েক আগে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই ‘আস্থা’ প্রকল্প চালু করে জেলার উন্নয়নের শূন্যস্থান পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি অনেকসময় নানান সমস্যায় সঠিকভাবে পৌঁছতে পারে না প্রত্যন্ত এলাকায়। পুলিশ যেন ডাক হরকরা। সরকারি প্রকল্পগুলির সুফল সরাসরি প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে আস্থা প্রকল্প হাতে নেয় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।

এই প্রকল্পের সুফল? চলছে অযোধ্যা পাহাড় ও পাহাড়তলি এলাকায় একাধিক রাস্তার কাজ। বড়গোড়া- আমকোচা রাস্তা হচ্ছে। রাস্তা না থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বড়গোড়া। আস্থা শিবিরে বিষয়টি জেনে সমস্যার কথা জেলা প্রশাসনের নজরে আনেন পুলিশ সুপার। রাস্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। ওই চলছে রাঙা-বাড়েলহর রাস্তার কাজ।
তেলিয়াভাসা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইনডোর পরিষেবা শুরু করার উদ্যোগ রয়েছে। সেখানে শয্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। রাঙ্গা স্কুলের সীমানা প্রাচীর আস্থা শিবিরের আরেক সুফল। চলছে আদিবাসীদের হোস্টেল চালুর প্রক্রিয়া। অযোধ্যা গার্লস হাই স্কুলে যাতে দ্রুত ছাত্রীনিবাস চালু হয়, তার তদ্বির করছে পুলিশ।
এদিনের বৈঠকে যোগ দেওয়া এলাকার মানুষজনের অনেকেই জানান, আধার কার্ড হয়নি তাঁদের। কারও নামের সমস্যা রয়েছে। কারও বা বায়ো মেট্রিক।সমস্যার কথা শুনে পুলিশ ঠিক করেছে রামনবমীর পরেই এই এলাকায় আধার তৈরির জন্য পুলিশের তরফে শিবির করা হবে।
পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র, বনদপ্তরের অরণ্য সম্বন্ধীয় সমস্যার নিষ্পত্তি, ভূমি সমস্যার সমাধান এবং অন্যান্য সমস্যার নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনিক সহায়তা কেন্দ্র মিলিয়ে মোট পাঁচটি স্টল ছিলো এদিনের এই খাটিয়া বৈঠকে । উপস্থিত ছিলেন ঝালদার মহকুমাশাসক রাখি বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা।
Post Comment