নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া:
হাতি-বাঘের পর এবার পুরুলিয়ার জঙ্গল থেকে উঠে এল আর এক চমক — শ্লথ ভল্লুক! কোটশিলার সিমনি বিটের ঘন জঙ্গলে প্রথমবার ধরা পড়েছে পুরোদস্তুর কালো, লোমশ শ্লথ ভল্লুকের ভিডিও। বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা এই দৃশ্য এখন আলোচনার বিষয় বাংলার। বছর চার – পাঁচ আগে বিষ্ঠা থেকে মেলেছিল উপস্থিতির ইঙ্গিত, তিন বছর আগে ট্র্যাপ ক্যামেরায় মিলেছিল সামান্য ঝলক। কিন্তু এবার প্রমাণ একেবারে নির্ভুল। পুরুলিয়া বনবিভাগের সঙ্গে ‘হিল’-এর যৌথ বন্যপ্রাণ পর্যবেক্ষণ প্রকল্পেই ধরা পড়েছে ভিডিওটি। বিভাগ জানিয়েছে, সিমনি বিটেই অন্তত ১০-১১টি ভল্লুক রয়েছে— পুরুষ ৩-৪টি, মহিলা ৬-৭টি, সঙ্গে কয়েকটি শাবকও। “শুধু ভিডিও নয়, উপস্থিতির হারও বাড়ছে। তাই চলতি শীতেই শুরু হচ্ছে ভল্লুক গণনা। সেই সঙ্গে শ্লথ বিয়ার কনজারভেশন প্রজেক্টও হাতে নেওয়া হচ্ছে,” জানালেন পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ।
এটাই হতে চলেছে পূর্ব ভারতের প্রথম শ্লথ বিয়ার কনজারভেশন প্রজেক্ট। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়া মিনি জু ঘুরে গিয়েছে সেন্ট্রাল জু অথরিটির প্রতিনিধি দল। পরিকল্পনা রয়েছে, ওই কেন্দ্রের সঙ্গেই যুক্ত করে একটি স্যাটেলাইট জু গড়ার— সম্ভাব্য জায়গার তালিকায় আছে মাঠা, ঝালদা ও কোটশিলা বনাঞ্চল।
কোটশিলা বনাঞ্চলের হরতান গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, সন্ধ্যা নামলেই ভল্লুক আসে লোকালয়ের ধারে। উইপোকা, ফলফুল, পিঁপড়ে খুঁজে বেড়ায়, ছোট ঝোরাতে জল খেতে নামে। সামনাসামনিও হয় মাঝেমধ্যে। তবে গ্রামের মানুষ জানেন, জঙ্গলে গেলে সাবধান থাকা ছাড়া উপায় নেই।
“জঙ্গলে ঢুকলেই নিশান নিয়ে যাই। ঝুমুর গান গাই। ওই আওয়াজ শুনে জাম্বুবান (ভল্লুক) বুঝে ফেলে মানুষ আছে, দূরে সরে যায়,” বললেন হরতানের ভরত মাহাতো। ডিএফওর কথায়, “সংকেত বা শব্দ শুনে বন্যপ্রাণ সতর্ক হয়ে যায়, বুঝতে পারে পরিবেশ অনুকূল নয়।”
বনবিভাগের দাবি, কোটশিলা ও ঝালদা রেঞ্জের মানুষ জঙ্গল আগলে রেখেছেন বলেই আজ ভল্লুক ‘রেসিডেন্ট’ হয়ে উঠেছে। তারা এমন বনেই থাকে যেখানে সমতলভূমির উদ্ভিদ, ঔষধি গাছ, ছোট প্রাণীর সংখ্যা বেশি। ভল্লুকের গুহা পরে দখল নেয় সজারু, প্যাঙ্গোলিনের মতো প্রাণীরা— ফলে গোটা বাস্তুতন্ত্রই সমৃদ্ধ হয়।
বনবিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, কোটশিলা সিমনিতে আছে দুটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও তিন-চারটি মাদি ভল্লুক, ঝালদার কলমা বিটে একটি পুরুষ, আর বাঘমুন্ডির কালিমাটি বিটে আছে এক পুরুষ ও দুটি মাদি।
পুরুলিয়া এখন বন্যপ্রাণের নতুন ঠিকানা’, বলছেন হিল-এর সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়। “গ্রামবাসীরা জঙ্গল আগলে রেখেছেন বলেই ভল্লুক আজ এখানকার ‘রেসিডেন্ট’। পুরুলিয়া এখন বন্যপ্রাণের নতুন ঠিকানা।”






Post Comment