নিজস্ব প্রতিনিধি, রঘুনাথপুর;
রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় যেখানে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নিয়ে বিএলও-দের ক্ষোভ, বিভ্রান্তি, বিক্ষোভের ছবি ফুটে উঠছে, ঠিক সেই সময়ই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে এক বিশেষভাবে সক্ষম বিএলও নিজের অধ্যবসায়, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠা দিয়ে প্রশাসনের কাছে হয়ে উঠলেন দৃষ্টান্ত।
বাবুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঙামাটি গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধেশ্বর মণি, ২৪৬/২২৫ বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলও এবং ডুঙরিয়াকুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক—মাত্র ১৪ দিনে নিজের পুরো বুথের সব এনুমারেশন ফর্মের তথ্য আপলোড করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন।
রঘুনাথপুর মহকুমার শাসক বিবেক পঙ্কজ তাঁর এই অভিনব কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানান।
ভোটার তালিকা সংশোধনের জটিল প্রক্রিয়া নিয়ে কোথাও কান্নাকাটি, কোথাও আন্দোলন—‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’ কলকাতায় আন্দোলনে বসেছে।
এই প্রেক্ষাপটেই বুদ্ধেশ্বর মণির শান্ত, পদ্ধতিগত কাজ করার ক্ষমতা প্রশাসনের নজর কাড়ে।
৭৯৭ জন ভোটারের এই বুথে কাজ শুরু করেন তিনি ৭ই নভেম্বর থেকে। ৪ঠা নভেম্বর প্রথম ৩০০ ফর্ম পেলেও অল্প সময়ের মধ্যেই বাকিগুলো হাতে আসে। ফর্মগুলি বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজিয়ে পিন-আপ করে নেন তিনি। তারপর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত একনাগাড়ে কাজ।

বিএলও বুদ্ধেশ্বর মণি বলেন,
“সকালবেলায় মা তারার পূজো করি। তাই দশটার আগে বেরোতে পারি না। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিল তিনবার করে বাড়ি যেতে হবে—আমি সেই নিয়মই মেনে চলেছি।”
প্রথম দফায় প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ফর্ম কীভাবে পূরণ করতে হবে তা বোঝানোর কাজ করেন তিনি।
দ্বিতীয়বার গিয়ে দেখেন বেশিরভাগ পরিবারই ফর্মে হাতই দেয়নি।
তখন সিদ্ধান্ত নেন—একেকটি এলাকা ধরে স্থানীয় মন্দির বা পাড়ার নির্দিষ্ট জায়গায় বসে মানুষকে ফর্ম পূরণ করিয়ে নিয়ে আসবেন।
এই কৌশলই তাঁর কাজকে দ্রুত এগিয়ে দেয়। ১১ নভেম্বর সমস্ত ফর্ম বিতরণ শেষ। ১২ নভেম্বর ফর্ম সংগ্রহ সম্পূর্ণ। ১৭ নভেম্বর ৮০% তথ্য আপলোড।১৯ নভেম্বর ৯০% সম্পূর্ণ। ২১ নভেম্বর সব আপলোড ও যাচাই শেষ। ২৪ তারিখে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয়।
এখন তাঁর কাজ—আপলোড করা তথ্যের সম্ভাব্য ভুল সংশোধনের সুযোগগুলো আরেকবার দেখে নেওয়া। সেই কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বুদ্ধেশ্বর মণির এই পারদর্শিতা শুধু সময়সীমা মেনে কাজ শেষ করার জন্য নয়, বরং প্রতিকূলতার মধ্যেও দায়িত্বের প্রতি তাঁর অনুগত মনোভাবের জন্য প্রশাসনের কাছে আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে।











Post Comment