দেবীলাল মাহাত, আড়শা
মহালয়া এগিয়ে আসতেই চরম ব্যস্ততা রেডিও সারানোর দোকানগুলোতে। রেডিও হাতে কার্যত লম্বা লাইন! মান্ধাতার আমলের পুরানো, মেরামত করা রেডিওতে মহালয়ার ভোরে বেজে উঠবে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সেই চিরপরিচিত কন্ঠ “আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির।”
সময় বদলেছে। প্রায় সকলের বাড়িতে এখন টিভি। হাতে হাতে স্মার্টফোন। এক ক্লিকেই কার্যত হাতের মুঠোয় দুনিয়া।
তাই বহুদিন আগেই গুরুত্ব হারিয়েছে রেডিওর। কাজ হারিয়েছে রেডিও মেরামতের কাজে যুক্ত মেকানিকরাও। স্রেফ হাতেগোনা কয়েক জন একাজে যুক্ত।
পিতৃপক্ষের শেষ আর দেবীপক্ষের সূচনায় মহালয়ার প্রাক্কালে সেই ছবি ধরা পড়লো পুরুলিয়ার আড়শা ব্লকের কুদাগাড়া গ্রামে। বহু দিনের পুরনো দোকান মন্টু কুমারের। তাঁর কথায়, “একটা সময় মহালয়ার আগে রাত-দিন কাজ করতে হয়েছে। এখন কাজ অনেক কমে গিয়েছে। নিয়মিত রেডিও শোনার লোক নেই বললেই চলে। তবে ব্যতিক্রম কি আর নেই? আমাদের গ্রামে আজও কিছু প্রবীণ মানুষ মহালয়ার আগে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী পাঠ শোনেন। আর তাঁদের জন্যই বেশ কিছু পুরাতন রেডিও মেরামতের জন্য দোকানে এসেছে। কিন্তু সমস্যা হল রেডিওর যন্ত্রাংশ আর পাওয়া যাচ্ছে না। জানি না এই পেশার সাথে আর কত দিন যুক্ত থাকতে পারবো!”
হতাশা ঝরে পড়ে তার গলায়।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় নবীন প্রজন্ম অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ইন্টারনেট মিডিয়ায়। ফেসবুক ইনস্টা, টুইটার, ইউটিউবেই কার্যত ডুবে রয়েছেন।
কিন্তু বয়স্ক মানুষজনের অনেকের রেডিওতে মহালয়া শোনা না হলে পুজোর আমেজই যেন শুরু হয় না! মহালয়ার ভোরে শুনতে চান সেই কন্ঠ।
দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রেডিও শুনে আসছেন আড়শা ব্লকের তুম্বা ঝালদা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত হাইস্কুলের শিক্ষক মধুসূদন মাহাত। তাঁর কথায়, ” রেডিওতে মহালয়া শোনার আনন্দ-ই আলাদা। এখনও রেডিওকে হাতছাড়া করিনি। “
Post Comment