নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :

ঝাড়খন্ড ছুঁয়ে থাকা পুরুলিয়ার বিভিন্ন জলাশয়ের ঘাট সোমবার বিকেল থেকেই যেন পরিণত হয়েছে এক টুকরো বিহারে। ছট উৎসব উপলক্ষে জেলার সাহেব বাঁধ, কাঁসাই নদীর তীর, দামোদরের পারবেলিয়া ঘাট—সবখানেই ভক্তদের ঢল। সূর্য দেবতার আরাধনায় সামিল হয়েছেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী।
সন্ধ্যা নামতেই সাহেব বাঁধের পাড়ে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সূর্যাস্তের সময় জলাশয়ে দাঁড়িয়ে পুণ্যার্থীরা অর্ঘ্য নিবেদন করেন। একসময় মানভূম জেলার অন্তর্ভুক্ত পুরুলিয়া তৎকালীন বিহারের অংশ ছিল। স্বাধীনোত্তর সময়ে বাংলায় যুক্ত হলেও, এখানকার জনজীবনে আজও মিশে রয়েছে বিহার ও ঝাড়খন্ডের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তাই পুরুলিয়ার ছট উৎসবও হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক ঐক্যের এক অনন্য প্রতীক।
এই উৎসব উপলক্ষে সাহেব বাঁধ সহ বিভিন্ন ঘাটে পুরুলিয়া পৌরসভা ও স্থানীয় সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে সহায়তা শিবির করা হয়। জলাশয় ও ঘাট পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অপ্রিয় ঘটনা এড়াতে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী।
পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ছট পুজোর বিভিন্ন ঘাট ঘুরে দেখেন। সাহেব বাঁধ ও কাঁসাই নদীর তীর পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “ছট উৎসব সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। এখানে ধর্ম বা ভাষার বিভাজন নেই—সবাই মিলেই এই উৎসব উদ্যাপন করছেন। পুরুলিয়া আজ একতার বার্তা দিচ্ছে সমগ্র বাংলাকে।”
অন্যদিকে, নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণ প্রসাদ যাদব সান্ধ্যকালীন অর্ঘ্য দেন দামোদর নদে। তিনি বলেন, “ছট শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয়, এটা প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার উৎসব।”

ব্রতী নিরজ কুমার পান্ডে জানাচ্ছেন ঠেকুয়া ও নারকেল দিয়ে সূর্যদেবকে অর্পণ করেন তাঁরা। খারনার পরের দিন অর্থাৎ সোমবার সকালে ঠেকুয়া তৈরি করে অর্ঘ্য দিয়েছেন।
ছট পার্বণের তৃতীয় দিনে ঠেকুয়া তৈরি হয় এবং চতুর্থ দিনে এই ঠেকুয়া দিয়ে মিষ্টি মুখ হয়।
পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ থেকে দামোদরের পারবেলিয়া ঘাট—সবখানেই ছটের ভক্তিতে মুখর মানুষ। সূর্যোদয়ের প্রাতে অর্ঘ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সমাপ্ত হবে এই আঞ্চলিক অথচ সর্বজনীন পার্বণ।








Post Comment