দেবীলাল মাহাতো
স্টেট এডেড কলেজ টিচার্স,
কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়
ই-মেইল-debilalmahato61@gmail.com
যোগাযোগ: ৮৯৭২২৮৯০০৪
হারিয়ে যেতে বসেছে মহিলা সেজে পুরুষদের সখী নাচ। সময়ের সাথে সাথে ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে এই নাচ। বলা যায় মানভূমের সংস্কৃতি থেকে অতীত হয়ে গিয়েছে এই নাচ। যাকে ‘দাঁড়’বা ‘ডাঁইইড়’ নাচ বলা হতো। সমান্তরাল ভাবে নাচা হতো বলে এই নাচকে বলা হয় দাঁড়। বর্তমানে এই ‘দাঁড়’ নাচ মানভূমে অন্য নাচের রূপ ধারন করেছে।ছৌনাচে এই নাচের রূপ দেখা যায়, তবে হারিয়ে গিয়েছে এই নাচের নিজস্ব সত্তা।
আশ্বিন ও কার্ত্তিক মাসে মূলত সখীনাচ বেশি হতো।পুরুষরা ৪-৫ জন মিলে মহিলা সেজে এই এই নাচ করতেন। সাথে থাকতো ঢোল ,ধামসা, ঝুনঝুনি সহ বিভিন্ন লোক বাদ্যযন্ত্র।প্রত্যেক পুরুষের হাতে থাকতো একটি করে রুমাল।যা এই নাচের বিশেষ বিশেষত্ব। সন্ধ্যার পর গ্রামের নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে চলতো এই নাচ। কোনো দেবতা কে নয়,’আখড়া’ কে বন্দনা করে শুরু হতো নাচ। আখড়ার মাঝে থাকতো একটি খুঁটি।নাচের সাথে যুক্ত পুরুষেরা মাথায় কলসি নিয়ে নানা ভঙ্গিমা দেখাতেন। মাঠে -ঘাটেও রাখাল বালক সহ পুরুষেরা
‘দাঁড়’ নাচের গান করতো। যা ‘ভাদরিয়া’ ঝুমুর নামে পরিচিত। এই ঝুমুর গানগুলো সহজেই শ্রোতার মনকে আনন্দ দিতো। যেমন “এত বড় ভাদর মাসে,পথে চইলে যাই হে/
কেউ নাই শুইধাল্য মুহে, জুন্-হার পড়া লাও হে ।।”
করম পরব সহ আশ্বিন মাসের জিতা অষ্টমীর রাতে গ্রামে গ্রামে চলতো রাত জেগে ‘ দাঁড়’ নাচ। এই জন্য ছিল বিভিন্ন শৌখিন দল। পেশাদারি দল ছিল না।কিছুদিন আগেও মানভূমে অতি জনপ্রিয় ছিল এই নাচ। কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ক্ষীরোদ চন্দ্র মাহাত জানান, “বর্তমানে পাতা নাচ, মহিলা ঝুমুর নাচের আদি রূপ হল ‘দাঁড়’ নাচ।” সখী নাচ তার নিজস্ব ঘরানা বা আদিরূপ থেকে হারিয়ে রঙ্গরসে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। যা পরে ‘পাতা’ বা ‘দাঁড়’ নাচে পরিবর্তিত হয়েছে। আধুনিকতার যুগে প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে এই ‘দাঁড়’ নাচ।
(লেখকের মতামত নিজস্ব )
Post Comment