নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া :
আসল দুর্গাপূজা। কথিত আছে শ্রীরাম অকালবোধনে আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা করার আগে, বসন্তকালেই হতো একমাত্র দুর্গাপূজা। পরে অকালবোধন জনপ্রিয় হয়ে উঠলে বসন্ত কালের দুর্গাপূজা বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত হয়।
জেলা জুড়ে বিভিন্ন জায়গাতে বাসন্তী পুজো হচ্ছে। পুরুলিয়ার বরাবাজারের নামোপাড়া শিব মন্দির প্রাঙ্গণে হচ্ছে এই পুজো। নামোপাড়ার চ্যাটার্জী পরিবারের সদস্যরা এই পুজো করে থাকেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বরাবাজার নামোপাড়া এলাকায় সর্বজনীন ভাবে আয়োজিত হতো বাসন্তী পূজা। এ বিষয়ে সন্তোষ চ্যাটার্জি বলেন , তাদের এই পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার নতুন করে এই পুজো শুরু হয়েছে এতে তারা খুবই খুশি।
একইভাবে পুরুলিয়ার কেন্দা থানার অন্তর্গত সুপ্রাচীন দরোডি মা তথা বাসন্তী পুজোর কথা প্রচলিত রয়েছে সর্বত্র। প্রতি বছর বাসন্তী পুজো উপলক্ষে অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয় এখানে। এই পুজোকে ঘিরে মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। পুণ্যার্থীরা পুকুর থেকে দণ্ডি কেটে মায়ের মন্দির পর্যন্ত আসেন। এ বিষয়ে পুরোহিত হরগোবিন্দ ওঝা ও স্থানীয় বাসিন্দা বিবেন চন্দ্র গোপ বলেন , “যে কোন মনস্কামনা এই মন্দিরে পূরণ হয়ে থাকে।বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই পুজো। এখানে মা খুবই জাগ্ৰত।

অপরদিকে পুরুলিয়ার ১ নং ব্লকের নদীয়াড়া গ্রামের বাসন্তী পুজো যথেষ্ট নজরকাড়া। গোটা গ্রাম একেবারে উৎসবের চেহারা নিয়ে নেয় পুজোর চারটে দিন। শুধুমাত্র জেলা নয়, ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতে আসেন। এই কয়েকদিন গ্রামীণ যাত্রাপালা, নানান সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় গ্রামে। এ বিষয়ে পুজো কমিটির সদস্য উপেন্দ্রনাথ পাল ও দিলীপ গোপ বলেন , “দেড় শতাধিক বছর আগে বসন্ত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল নদীয়াড়া গ্রাম সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে। আতঙ্কে গ্রামছাড়া হতে শুরু করেছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে ঘটতে থাকে নানান অঘটন। সেই সময় বাসন্তী মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এবং এক সন্ন্যাসী বাবার পরামর্শে নদীয়াড়া গ্রামের মাঝে বাসন্তী পুজো শুরু করেন গ্রামবাসীরা। এরপরই রোগমুক্ত হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামছাড়া মানুষেরাও ধীরে ধীরে গ্রামে ফিরে আসেন। সেই সময় থেকে এখনও পুরনো আচার বিধি মেনে বাসন্তী পুজো হয়ে আসছে এই গ্রামে। “
বাসন্তী পুজোকে ঘিরে মেতে উঠেছেন জেলা পুরুলিয়া। সর্বত্র সাজো সাজো রব।
Post Comment