নিজস্ব প্রতিনিধি, কোটশিলা :
নতুন চিতাবাঘের সন্ধানে কোটশিলার সিমনিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার প্রস্তাব পাঠালো পুরুলিয়া বন দফতর। অরণ্যভবনে সেই উদ্যোগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
সিমনির জঙ্গল যেন দিনকে দিন হয়ে উঠছে চিতাবাঘের নিরাপদ আশ্রয়। আর সেই কারণেই বন দফতরের নতুন ভাবনা—পুরুলিয়ার কোটশিলা রেঞ্জের সিমনি বিটকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা। কারণ, সম্প্রতি ওই অরণ্যে প্রবেশ করেছে এক নতুন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘ। পরপর দু’দিন—১৩ ও ১৪ নভেম্বর—ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়েছে তার উপস্থিতি।
বন দফতর মনে করছে, এ চিতা স্থানীয় নয়। ঝাড়খণ্ডের দলমা বা হাজারিবাগের দিক থেকেই এসেছে সে। সিমনির মাদি চিতাবাঘটির দুই শাবক এখন সাব-এডাল্ট হয়ে উঠছে। ফলে বিড়াল প্রজাতির স্বভাব অনুযায়ী মাদির মিলন-আগ্রহ ফিরে এসেছে। সেই গন্ধেই নতুন পুরুষের আগমন বলে মনে করছেন বনকর্মীরা।
বর্তমানে সিমনিতে চিতাবাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত সাত। ২০২২ সালে প্রথম পুরুষ–মাদি জুটির ছবি ধরা পড়েছিল। পরে জন্মায় দুই শাবক। সে দু’টি এখন পূর্ণবয়স্ক হবার পথে। আরও দু’টি ঘোরাফেরা-করা চিতাকে নিয়ে জঙ্গলটি এমনিতেই চিতা বাঘের একটি স্থায়ী আবাস তৈরি করেছে। এ বার নতুন পুরুষ চিতার আগমন সিমনিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলল।
ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “নতুন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘ কোটশিলা রেঞ্জে ঢুকেছে—এটি বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বাইরে থেকে নতুন জিন এলে ভবিষ্যতে বংশবিস্তার আরও সুস্থ ও শক্তিশালী হবে।”

বন দফতরের তথ্য বলছে, নতুন পুরুষ শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছে না—শিকারও করছে। সেই ছবিও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। ফলে বন কর্মকর্তাদের ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে—সিমনি দ্রুতই বন্যপ্রাণের সমৃদ্ধ আবাসভূমি হয়ে উঠছে।
সিমনির বিশেষত্ব আরও একটি জায়গায়—এ এলাকার গ্রামবাসীরা চিতাবাঘের উপস্থিতিকে শত্রু বলে মানেন না। গবাদিপশুর ক্ষতি হলেও রেষারেষি করেন না। বরং চান জঙ্গল আরও সমৃদ্ধ হোক, এখানে বাড়ুক ওয়াইল্ডলাইফ ট্যুরিজমের সম্ভাবনা।
এই পরিবেশই বন দফতরকে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে—সিমনিকে কি সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা যায়? ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে অরণ্যভবনে। প্রাথমিক পর্যায়ের খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে উপরমহলে।






Post Comment