insta logo
Loading ...
×

শিক্ষার বেসরকারিকরণ!মোদিকে চিঠি জ্যোতির্ময়ের

শিক্ষার বেসরকারিকরণ!মোদিকে চিঠি জ্যোতির্ময়ের

সুজয় দত্ত, পুরুলিয়া :

“শিক্ষাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সুচতুর ষড়যন্ত্রে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।” এমন মারাত্মক অভিযোগ তুলে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাংলার প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। রাজ্য উত্তাল। বিরোধীরা রাজ্য সরকারকে দুষছে। তৃণমূল সুপ্রিমো স্বয়ং বিরোধীদের দায়ী করছেন। এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে এই চিঠি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ভেঙে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলার যুব সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা লালন করার পরিবর্তে, রাজ্য সরকার শিক্ষাকে দুর্নীতির একটি সংগঠিত সিন্ডিকেটে পরিণত করেছে। অগণিত শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করেছে তাঁদের মৌলিক অধিকার থেকে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার যে নির্দেশ বহাল রেখেছে তা বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রার প্রমাণ। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সংগঠিত লুঠের এমন এক নকশা, যেখানে তৃণমূল নেতা এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে রূপান্তরিত করেছেন। অবৈধ নিয়োগ শুধুমাত্র যোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাই নয়, বরং পঙ্গু করে দিয়েছে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে।”

জ্যোতির্ময় বাবুর অভিযোগ, “যথাযথ পরিকাঠামো আর অনুমোদন না থাকা সত্বেও তৃণমূল নেতারা এবং তাঁদের অনুগামীরা চটজলদি খুলে ফেলছেন একের পর এক বেসরকারী বোর্ডের অধীনে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। এই প্রতিষ্ঠানগুলি মৌলিক শিক্ষাগত নিয়ম লঙ্ঘন করলেও রাজনৈতিক প্রভাবে স্বীকৃতি পায়।অন্যদিকে সরকারী স্কুলগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে না অনুদান। বেসরকারি মাধ্যমকে প্রাধান্য দিতে সরকারি শিক্ষা মাধ্যমকে হীন প্রতিপন্ন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।”

চিঠিতে পুরুলিয়ার সাংসদ তুলে এনেছেন সারদা দুর্নীতির প্রসঙ্গ। বলেছেন,” এই শিক্ষা দুর্নীতিও সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারির মতো। সারদায় তৃণমূল নেতারা পঞ্জি স্কিমের মাধ্যমে জনসাধারণের অর্থ লুঠ করেছে, এখানেও সেই একই পদ্ধতিতে চলছে শোষণ। একদিকে সরকারি স্কুলে তারা অবৈধ নিয়োগ করেছে, অন্যদিকে অনুমোদনহীন প্রাইভেট স্কুলগুলির মাধ্যমে জনসম্পদ লুঠ করছে। তারপর, যখন সত্য উদ্ঘাটন হচ্ছে, তখন করদাতা জনগণের টাকা খরচ করে হাই প্রোফাইল আইনজীবী নিয়োগ করে ন্যায়বিচারকে ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়। তাদের শোষণ মুঘল আমল আর ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের থেকেও বেশি। প্রতিবাদী কণ্ঠকে চুপ করাতে পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে চলে সরকার। তৃণমূলের এই শিক্ষা দুর্নীতির ফলে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একসময় সারা দেশে শ্রেষ্ঠত্বের আলোকবর্তিকা ছিল যে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা, ব্যাপক স্বজনপোষণ আর ঘুষ কেলেংকারিতা আজ তা অধঃপতিত। যোগ্যতার বদলে দুর্নীতিই তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্দেশ করছে। “

চিঠিতে সাংসদের আবেদন,
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দূরদর্শী নেতৃত্বে যখন বাকি ভারত বিশ্বগুরু হওয়ার দিকে অগ্রসর, তখন সংগঠিত দুর্নীতিতে সমৃদ্ধ একটি সরকার বাংলাকে পিছিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলার জনগণকে শাসনের মৌলিক দিক থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

শিক্ষার বেসরকারিকরণের চক্রান্ত চলছে এমন অভিযোগ তুলে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আর্জি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো।

Post Comment