insta logo
Loading ...
×

বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ধৃত নকলি ইনকাম ট্যাক্স ডাকাতিতে

বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ধৃত নকলি ইনকাম ট্যাক্স ডাকাতিতে

নিজস্ব প্রতিনিধি, কোটশিলা :

প্রোফাইল পিকচারে জ্বলজ্বল করছে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর ছবি। তিনি বিজেপি দলের জয়পুর বিধানসভার আহ্বায়কও। জেলা বিজেপির এ হেন শীর্ষ নেতা পরান চন্দ্র মাহাতোকে আয়কর আধিকারিক পরিচয় দিয়ে কোটশিলার বামনিয়া গ্রামে ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মেদিনীপুরে লুকিয়ে ছিলেন তিনি।

কোটশিলায় বিড়ি ব্যবসায়ী কিরীটি কুমারের বাড়িতে ভুয়ো ইনকাম ট্যাক্স অফিসার সেজে ডাকাতির ঘটনায় নতুন মোড়। সিআরপিএফ জওয়ানের পর এবার গ্রেফতার বিজেপি নেতা! মঙ্গলবার ভোরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোতওয়ালি থানা এলাকার রাজাবাজার সংলগ্ন এলাকায় তাঁর এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় পুরুলিয়ার বিজেপি নেতা পরান চন্দ্র মাহাতোকে।

ধৃত নেতা ঝালদা ২ নং ব্লকের রিগিদ অঞ্চলের তামাকবেড়া গ্রামের বাসিন্দা। একসময় কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন তিনি। বছর সাতেক আগে বিজেপিতে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যে আসীন হন জেলা বিজেপির সম্পাদক পদে। এখন তিনি বিজেপির জয়পুর বিধানসভা আহ্বায়ক। গত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝালদা ২ ব্লকের ২১ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে বিজেপি তাঁকে টিকিটও দিয়েছিল। হেরে যান তিনি। পেয়েছিলেন ৬৬২২ ভোট। ছিলেন চতুর্থ স্থানে।

পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর হয়ে পুরুলিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে আসা নরেন্দ্র মোদীর সভাতেও তিনি মঞ্চের সামনেই ঘোরাফেরা করেছেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীকে নমস্কার বিনিময়ের ছবি তার মেট্যা অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচারে জাজ্বল্যমান।

কোটশিলায় বিড়ি ব্যবসায়ী কিরীটি কুমারের বাড়িতে গত এপ্রিল রাতে ডাকাতির ঘটনায় অন্যতম চক্রী তিনি বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। বুধবার ধৃতকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হবে।

ভুয়ো ইনকাম ট্যাক্স অফিসার সেজে ডাকাতির ঘটনায় বিজেপি নেতা সহ এই নিয়ে মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।

সোমবার রাঁচির কাঁটাটোলি এলাকা থেকে ওসফ ওরফে মাসুম খানকে ধরে আনে পুলিশ। মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হলে তার ৪ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।

অন্যদিকে এই ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত ১ সিআরপিএফ জওয়ান সহ ৭ জনের মধ্যে ৬ জনকে সোমবার পুরুলিয়া আদালতের বিচারকের নির্দেশে পাঁচ দিনের হেফাজতে পায় পুলিশ। আরেক তরুণীর শনাক্তকরণ প্যারেডের জন্য ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশ হেফাজতে পেয়েছে রাঁচি জেলার বাসিন্দা সিআপিএফ জওয়ান পরেশ দাস, কপিলদেব মাহাতো, সুরজ কুমার মাহাতো, খুশবু মণ্ডল ও কোটশিলা থানা এলাকার সমীর রায় ওরফে লিচু, মহিম কুমার ও ওসফ ওরফে মাসুম খানকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। আরেক তরুণীকেও পুরুলিয়া সংশোধনাগারে টি আই প্যারেড করানোর পর নিজেদের হেফাজতে নিতে চান তদন্তকারীরা।

পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, গোটা অপারেশনের মাস্টার মাইন্ড রাঁচির বুন্ডু শহরের বাসিন্দা সিআরপিএফের জওয়ান পরেশ দাস। বর্তমানে তিনি খুঁটি এলাকায় ৯৪ ব্যাটেলিয়নে কর্মরত। ছুটিতে এসে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটান তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে সি আর পি এফ জওয়ানের অন্যতম সহযোগী বিজেপি নেতা পরান।

কী ছিলো ডাকাতির ব্লু প্রিন্ট?

পুলিশ জানতে পেরেছে :-

ক) কোটশিলার বামনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মহিম কুমার দুস্কৃতী দলটির অন্যতম সংবাদ সরবরাহকারী। আগে তিনি বিড়ি পাতার ব্যবসা করতেন। ফলে সোলজার বিড়ি মালিকের বিভিন্ন তথ্য ছিলো তাঁর নখদর্পণে।

খ) অভিযোগ, পরান মাহাতো মহিমকে জানান, এমন একজনের খোঁজ চাই, যাঁর বাড়িতে কোটি কোটি টাকা।

গ) এর পরেই মহিম তাঁর প্রতিবেশী বিড়ি ব্যবসায়ী কিরীটি কুমারের নাম জানান। তাঁর ব্যবসা সংক্রান্ত নানান তথ্য জোগাড় করতে সহযোগিতা করে ওই থানা এলাকার তহদ্দিরি গ্রামের বাসিন্দা সমীর রায় ওরফে লিচু।

ঘ) কয়েক সপ্তাহ জুড়ে চলে তথ্য সংগ্রহ। দিন কয়েক আগে বিড়ি ব্যবসায়ীর বাড়িতে জিএসটি হানা দিয়েছিল। সেই তথ্য হয় সোনায় সোহাগা।

ঙ) সব তথ্য বিজেপি নেতা পরানই নাকি সরবরাহ করেন ঝাড়খণ্ডের গ্যাংকে।

চ) বামনিয়া এলাকায় কোটশিলা থানার পুলিশের টহলদারি ভ্যান কখন যাতায়াত করে সেই তথ্যও দেওয়া হয়।

ছ) কোন পথ ধরে অপারেশনের পর তারা ভাগলবা হবে তা স্থির করতে কয়েকদিন ধরে কোটশিলা থেকে ঝাড়খণ্ড যাওয়ার বিভিন্ন পথে চলে রেইকি।

জ) তথ্যগুলো নিয়ে প্রাথমিক ব্লু প্রিন্ট সাজান ওই বিজেপি নেতা বলে অভিযোগ। প্ল্যান সহ সমস্ত তথ্য তুলে দেওয়া হয়
মাস্টারমাইন্ড পরেশ দাসের হাতে।

ঝ) এর পরেই তৈরি হয় ওই ডাকাতির চূড়ান্ত ছক।

ঞ) পুলিশ জানতে পেরেছে, মহিম এবং সমীর ওরফে লিচু ঘটনার দিন ব্যবসায়ীর বাড়ির অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরান কোথায় ছিলেন? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ট) ডাকাতি করতে এসে যাতে রাস্তায় কোনো বাধা না পেতে হয় তার জন্য গ্যাংটি ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ টি এসইউভি গাড়ি ভাড়া করে। এক একটি গাড়িতে দু’জন করে পৌঁছায় বামনিয়া এলাকায়। ওই সমস্ত গাড়ির খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

জটিলতা রয়েছে অন্যত্র। ইদানীং রাজ্য ও কেন্দ্রের সম্পর্কে চূড়ান্ত অবনতির ফলে বাংলায় দুর্নীতি দমনে কোনো কেন্দ্রীয় এজেন্সি কোন এলাকায় হানা দিলেও সেই তথ্য আগাম জানানো হচ্ছে না স্থানীয় থানাকে। ফলে কেন্দ্রীয় সংস্থার ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ‘ স্পেশাল ২৬ ‘ সিনেমার কায়দায় ডাকাতির ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও বিজেপি নেতার যোগে উদ্বেগ বেড়েছে পুলিশ সহ ব্যবসায়ীদের মনে।

পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তরফে প্রচার করা হচ্ছে, যে-কোনো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোথাও হানা দিলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা তার পরিবার স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানান। পুলিশের তরফে নিশ্চিত করতে সুবিধে হবে ওই হানা আসল না নকল!

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” ওই ডাকাতির ঘটনায় অন্যতম মাথাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী
সন্ধ্যারানি টুডুর ইঙ্গিত রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “ডাকাতির অপরাধেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বিজেপি নেতার যোগ! দলটার কী অবস্থা হয়েছে এই ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করে দিলো।”

অন্যদিকে বিজেপি জেলা সভাপতি শংকর মাহাতো বলেন, ” কেন ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানি না। আগামীকাল কোর্টে তোলা হলেই বিস্তারিত জানতে পারব। “

Post Comment