বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, পুরুলিয়া:
তিনি পেশায় শিক্ষক। কিন্তু মননে শিল্পী। তাই প্রায় ১৮ বছর ধরে নিজের হাতে লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ে পুজো করে আসছেন।
এবার দেড় ফুটের লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে পাট দিয়ে দেবীর আলয়। যা দেখে চোখ টানছে। আর এই শিল্পকর্মে তাঁর একটা ভাবনা ফুটে উঠেছে। সেই ভাবনার মধ্যে দিয়েছেন সামাজিক বার্তা। শহর পুরুলিয়ার রাঁচি রোড বাইলেনের বাসিন্দা তথা শিক্ষক শঙ্কর মুখোপাধ্যায়। পুরুলিয়া মফস্বলের বেলকুড়ি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের সংস্কৃত শিক্ষক। এবার তিনি মূলত পাট শিল্পকে কাজে লাগিয়েই লক্ষ্মী প্রতিমার আলয় তৈরি করেন। তাঁর দক্ষ হাতের নিখুঁত কাজ একেবারে নজরকাড়া। কয়েক বছর ধরেই তিনি ১১ রকমের মাটি দিয়ে তাঁর নিজের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ছেন। বছর দুয়েক আগে তাতে মিশিয়েছেন বদ্রিনাথের মাটি। সঙ্গে মন্দাকিনী উষ্ণ প্রস্রবনের জল। প্রতি বছর মহালয়ার আগে তিনি এই লক্ষ্মী প্রতিমার ভাসান দেন টবে। তারপর টবে থাকা সেই মাটিতেই গড়েন মায়ের প্রতিমা। আর সেই দেড় ফুটের প্রতিমা চোখ টানছে। মায়ের শাড়িও যে তাঁর হাতেই তৈরি। এবার তিনি সিনথেটিক জরি দিয়ে ব্রোকেট শাড়ি তৈরি করেন। জরি দিয়ে বুনে বুনে এই নিখুঁত কাজ দেখলে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
দেবীর আলয় গড়তে পাট ব্যবহার করার পাশাপাশি সামান্য থার্মোকল ব্যবহার করেছেন। এই কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর বার্তা বর্জন করা থার্মোকলকে শিল্পকর্মে ব্যবহার করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করা। তাঁর দেড় ফুটের লক্ষ্মী প্রতিমা যেন একেবারে সোনায় ঢাকা। সোনার অলঙ্কারে ধনলক্ষ্মীকে সাজিয়ে তুলেছেন শিক্ষক। সোনার হার, কানের দুল, চিক, কোমরবন্ধনী, বাজুবন্ধ, হাতের চুড়ি, আংটি, সিঁথি, মুকুট, নথ, চুটকি এসব ছিলই। এবার নতুন যুক্ত হয়েছে পায়ে নুপূর। আলয়ের মাঝখানে তিনি একটি অগ্নিকুণ্ড করেছেন। শিক্ষকের বার্তা, ” সামাজিক অবক্ষয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে অনাচার, বেনিয়ম হচ্ছে তা যেন আহুতি স্বরূপ ওই অগ্নিকাণ্ডে বিনাশ ঘটে।” ওই আলয়ের দু’পাশে রয়েছে সরোবর। সেখানে থাকবে প্রস্ফুটিত কমল। ওই শিক্ষক- শিল্পীর কথায়, অনৈতিক কাজকর্ম বিনাশ হয়ে কমলের মত প্রস্ফুটিত হয়ে উদ্ভাসিত হোক এটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা। দেবীর আলয় গড়তে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের শিল্পকলাকে ব্যবহার করেছেন তিনি।
ভারতীয় সনাতন ধর্মের মন্দিরের আদল সেইসঙ্গে হাজারদুয়ারির যে স্তম্ভ আছে তার মিশেলে মা লক্ষ্মীর আলয় তৈরি হয়েছে। এখন শেষবেলার ফিনিশিং টাচ চলছে। দু’মাস আগে থেকে তিনি এই কাজ শুরু করেন। মাঝখানে শরীর খারাপ হওয়ায় সময় দিতে পারেননি। তাঁর শিল্পকর্ম কয়েক বছর ধরেই শহর পুরুলিয়ায় ব্যাপক নজর কেড়েছে। একেবারে ছেলেবেলা থেকেই তিনি এই শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত। হাতে-কলমে কখনও মূর্তি তৈরির কাজ না শিখলেও মাতৃপ্রতিমার টানে কুমোর পাড়ায় বসে থাকতে তাঁর ভালো লাগতো। সেখান থেকেই তিনি এই কাজ রপ্ত করেন। স্কুলে পাঠদানের পাশাপাশি এই শিল্পকর্মও পড়ুয়াদের শেখান শিক্ষক- শিল্পী শঙ্কর।
Post Comment